প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ ফেব্রুয়ারি :পৌরসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হতে না পারা নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভে এখনও বিরাম পড়ে নি।তবে দল প্রার্থী হিসাবে যাঁদের নাম ঘোষনা করেছে তাঁদের সবাই আদৌ প্রার্থী নমিনেশন দাখিল করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়।যেমনটা হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষিত প্রার্থী রেখা হেমব্রমের ক্ষেত্রে ।তবে আইনি গেরোয় শুধু যে তৃণমূলের প্রার্থী দেরই প্রার্থী নমিনেশন দাখিল অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এমনটা নয় ।একই অবস্থা তৈরি হয়েছে এই জেলার বাম প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও । কি ভাবে এই অনিশ্চয়তার নিরশন করা যায় তা নিয়ে দুই দলের নেতৃত্বই আইনজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া শুরু করে দিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক পৌরসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দি বিজেপি প্রার্থীদের হাইকোর্টে করা মামলার রায়-ই এখন ভরসা সব দলের ।
মেমারি পৌরসভার মোট ওয়ার্ড ১৬ টি । গত ২০১৫ সালের পৌরসভা নির্বাচনে মেমারির ১১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রেখা হেমব্রম।তিনি জয়ীও হন ।তারপর থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসাবে দীর্ঘ সময় পারকরে দিলেও তিনি ২০১৫ সালের নির্বাচনী খরচের হিসাব কমিশনে জমা করেন নি বলে অভিযোগ।এমনকি এইসংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট করে দেওয়া সময় সীমার মধ্যে শোকজের জবাবও তিনি দেননি বলে অভিযোগ।যার কারণে প্রার্থী রেখা হেমব্রমের নামে সোমবার মহকুমা শাসকের (বর্ধমান দক্ষিন) দফতরে ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিপ্ট (ডিসিআর) কাটতে গিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বকে হতাশ হয়েই ফিরতে হয় ।
এই অবস্থায় মেমারির ১১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী বদল করে নতুন কাউকে প্রার্থী করতে হবে কিনা তা নিয়েই এখন দোটানায় তৃণমূলের নেতৃত্ব। বিষয়টি ইতিমধ্যে রাজ্য নেতৃত্বকেও জানিয়েছেন মেমারির তৃণমূল নেতৃত্ব। তাদের তরফে কি উত্তর আসে সেদিকেই এখন তাকিয়ে মেমারির তৃণমূল নেতারা।তবে এরই মধ্যে বিষয়টি জানতে পেরে নড়ে চড়ে বসেছেন প্রার্থী হবার স্বপ্ন পূরণ হয় নি এমন অনেকে মেমারির তৃণমূল নেতা বলে। দলীয় কর্মীরা জানাচ্ছেন ,মহিলা সংরক্ষিত ১১ নম্বর ওয়ার্ডে নিজেদের স্ত্রীকে কিভাবে প্রার্থী করা যায় তানিয়েই এখন মেমারির নেতা নানা মহলে তদবির করা শুরু করে দিয়েছেন ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে ,গতবার পৌর ভোটে প্রতিদ্বন্দিতা করে জয়ী হয়ে যাবার পরেও মেমারির কয়েকজন কউন্সিলর তাঁদের নির্বাচন খাতে খরচের হিসাব কমিশনে জমা দেন না।সেই কারণে কমিশনের তরফে সেবারের ভেটে প্রতিদ্বন্দি মেমারির তৃণমূল প্রার্থী প্রতিমা বসাক,রঞ্জিত বাগ,রতন দাস ,
আসাদ উদ্দিন মহম্মদ ও রেখা হেমব্রম কে নেটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পাবার পর এদের অনেকেই নির্বাচন খাতে খরচের হিসাব জমা দিয়ে দেন।কিন্তু হিসাব জমা দেন না মেমারির ১১ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী প্রার্থী রেখা হেমব্রম ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী প্রার্থী আসাদ উদ্দিন মহম্মদ। তার কারণে
চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি জেলার পৌর নির্বাচনী আধিকারিক (ডি এম )তাঁদের ’শোকজ’ নোটিশ পাঠান।নোটিশ পাবার দু’দিনের মধ্যে ’শোকজের’ জবাব দাখিলের জন্য এই দু’জনকে সময়সীমা বেধে দেওয়া হয় ।অভিযোগ সেই সময়সীমার মধ্যে আসাদ উদ্দিন শোকজের জবাব কমিশনে জমা দিলেও রেখা হেমব্রম শোকজের জবাব দেন না।এরই মধ্যে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবারের পৌরসভা নির্বাচনে দিন ঘোষনা করে দেবার পর তৃণমূল কংগ্রেস দল গত শুক্রবার তাঁদের প্রার্থীদের নাম ঘোষনা করেদেয় ।তৃণমূলে তরফে পুনরায় রেখা হেমব্রম কে মেমারি পৌরসভার প্রার্থী করলেও আসাদ উদ্দিন কে আর প্রার্থী করে নি।তবে প্রার্থী হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিশনে শোকজের জবাব না দেওয়ার জন্য এবার রেখা হেমব্রম প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করতে পারবেন কিনা তা নিয়েই তৈরি হয়েছে সংশয় ।এই বিষয়ে রেখা হেমব্রম যদিও সংবাদ মাধ্যকের কাছে কোন প্রতিক্রিয়া দিয়ে অস্বীকার করেন ।
এই পরিস্থিতিতে মেমারির তৃণমূল নেতৃত্ব ও প্রার্থী রেখাকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে তমলুক পৌরসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দিনা করতে চাওয়া বিজেপি প্রার্থীদের করা মমলা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দেওয়া রায়।গত পৌরসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দিতা করেও নিজেদের সম্পত্তি ও নির্বাচন খাতে খরচের হিসাব জমা না দেওয়ায় তমলুকের ৬১ জন প্রার্থীর নাম বাতিল করে দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কমিশনের এমন সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে তমলুকের তিন বিজেপি প্রার্থী জয়া দাস নায়েক,বিশ্বজিৎ কয়াল ও বিভা চক্রবর্তী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলাটি সোমবার আদালতে বিচারের জন্য তোলা হলে নির্বাচন কমিশন জানায় , মামলাকারী তিনজন সহ মোট পাঁচজন প্রার্থীর ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত পুনবিবেচনা করা হবে । ওই পাঁচ জন পৌর ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন বলেও কমিশন আদালতে জানায়। মেমারির পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী রেখা হেমব্রমের বিরুদ্ধেও অভিযোগ সেই একই । তাহলে তাকেও কি প্রার্থী হবার জন্য
হাইকোর্টে মামলা করতে হবে ,নাকি তমলুক পৌরসভার ভেটে প্রতিদ্বন্দিতা করতে চাওয়া বিজেপি প্রার্থীদের করা মামলার রায় রেখার ক্ষেত্রেও মান্যতা পাবে ?বিষয়টি নিয়ে দলের উচ্চ নেতৃত্ব আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছেন বলে জানালেন মেমারি শহর তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা ।
অন্যদিকে এদিন কালনা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দি সিপিএম প্রার্থী শীলা রাজবংশী কালনা মহকুমা শাসকের দফতরে নমিনেশন দাখিল করতে গিয়ে নিরাশ হন । নমিনেশন পত্রের সঙ্গে তিনি ভিন রাজ্যের তপশিলী জাতিগত শংসাপত্র জমা করার তাঁর নমিনেশন জমা নেওয়া হয় না । কমিশনের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বোচ্চার হন সিপিএম নেতৃত্ব । তাঁরা বলেন, ভিন রাজ্যের মেয়ে শীলার বিয়ে হয়েছে কালনায়। একই দেশের ভিন ভিন্ন রাজ্যের জাতিগত শংসাপত্র দিয়ে
চাকরিক্ষেত্রে ও পড়শুনার ব্যাপারে করা আবেদন গ্রাহ্য হচ্ছে।তাহলে ভোটের নমিনেশনে ভিন রাজ্যে জাতিগত শংসাপত্র কেন গ্রাহ্য হবে না ? এই প্রশ্ন কমিশনের কাছে রেখেছেন কালনার সিপিএম নেতৃত্ব । এই বিষয়ে কালনা মহকুমা শাসকের দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন ,বিষয়টি উচ্চ
কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।ওনারা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ।।