এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেহেরান,০৭ জানুয়ারী : সর্বসমক্ষে ১৭ বছর বয়সী কিশোরী স্ত্রীর শিরশ্ছেদ করল যুবক । তারপর সে একহাতে ছুরি ও অন্যহাতে কাটা মুন্ড নিয়ে মোবাইল ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে রীতিমত পোজ দিল । ঘুরল শহরের রাস্তায় ৷ ভয়ঙ্কর এই ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বিকেলে ইরানের আহওয়াজ (Ahvaz) শহরে । ঘটনার পর মৃতার স্বামী ও তার সহযোগী ভাইকে আটক করেছে স্থানীয় পুলিশ । খুজেস্তান প্রদেশের প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, প্রদেশের বিচার বিভাগ এই ঘটনার অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া চালাবে ।
সম্প্রতি,যুবকের বাম হাতে ধরা তাঁর কিশোরী স্ত্রীর কাটা মুন্ড ও ডান হাতে একটি ছুরি ধরা অবস্থার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইর্যাল হলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে । জানা গেছে,শনিবার বিকেল ৩ টে নাগাদ আহওয়াজের কাসাই স্কোয়ারে ওই ব্যক্তি তার স্ত্রীর কাটা মাথার সঙ্গে পোজ দিয়েছিলেন । উপস্থিত লোকজনের ওই অবস্থায় তার ছবি তোলে । তবে কিছুক্ষণ পর সে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ তল্লাশি অভিযান শুরু করে । ওই দিনই খুনি স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয় । পুলিশ জানায়, ওই ব্যক্তি জানিয়েছে ‘পারিবারিক সমস্যার’ কারণেই সে নাকি তার স্ত্রীকে এভাবে খুন করেছে । পুলিশ কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে ।
ঘটনার পর একটি স্বাধীন অধিকার গোষ্ঠী IranTrue.com ট্যুইটারে লিখেছে,একজন ১৭ বছর বয়সী কিশোরী যে তার স্বামীর ভয়ে তুরস্কে পালিয়ে গিয়েছিল । কিন্তু তার স্বামী তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফের ইরানে ফিরিয়ে নিয়ে আনে । আজ ওই যুবক তার ভাইয়ের সহায়তায় মেয়েটির শিরশ্ছেদ করল । পরে খুনি তার কাটা মাথা হাতে নিয়ে শহরে প্যারেড করে । ইসলামিক আইনে ‘অনার কিলিং-এর জন্য ন্যূনতম জেলের সাজা দেওয়া হয় ।’
ইরান ট্রু লিখেছে,’ইরানের একটি নারী অধিকার গোষ্ঠীর ২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, গত দু’বছরে শুধুমাত্র খুজেস্তানে ৬০-এর অধিক অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে । মৃতরা প্রত্যেকের বয়স ১১ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে । এর মধ্যে হাতে গোনা ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে । হত্যাকারীদের কারোর বিচার হয়নি । এরপর শনিবার ইরানের খুজেস্তানে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী বীভৎস অনার কিলিংয়ের শিকার হল ।’ এরপর লেখা হয়েছে,’আইআরজিসি মিডিয়া উলটে নিহত কিশোরীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ছবি রাখার জন্য দোষারোপ করতে শুরু করে দিয়েছে । ঘটনার পর যে ভিডিওটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন তার খোঁজ চালাতে শুরু করেছে আহভাজ প্রসিকিউটর ।’
ইরানের এক মহিলা সাংবাদিক তথা নারী-অধিকার কর্মী নিলোফার আইয়ুবী(Nilofar Ayoubi) ট্যুইটারে লিখেছেন,’আজ ইরানে একটা হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে গেল । এই ব্যক্তি তার ১৭ বছর বয়সী স্ত্রীর শিরশ্ছেদ করার পর তার মাথা হাতে নিয়ে ঘুরছে । যে মেয়েটি প্রাণ বাঁচিয়ে নিরাপদে তুরস্কে পালিয়ে গিয়েছিলেন । কিন্তু বাধ্য হয়ে তাকে ইরানে ফিরতে হয়েছিল । ইরানে ১৪ বছর বয়সী মেয়ের শিরশ্ছেদকারী পিতার ৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় । সেখানে একজন মহিলাকে হিজাব খোলার অপরাধে কারাদণ্ড দেওয়া হয় ২৪ বছর ।’
এদিকে ঘটনার পর ‘লেট ইউ টক’ হ্যাশট্যাগের অধীনে বেশ কিছু মহিলা সাংবাদিক ও মানবাধিকার গোষ্ঠীর মহিলারা টুইটারে ইরানের চরমপন্থাকে লক্ষ্য করে নিশানা করতে শুরু করে দিয়েছে ।আন্দোলনকারীরা জোরপূর্বক হিজাব পড়তে বাধ্য করা, নারীর প্রতি বৈষম্য এবং ইসলামি নীতির দ্বারা সমর্থিত নৃশংসতার বিরুদ্ধে খোলাখুলিভাবে সমালোচনা শুরু করে দিয়েছেন ।
উল্লেখ্য,ইরানের মত একটা কট্টর মুসলিম রাষ্ট্রে যখন
নারীর বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অত্যাচারের জন্য কঠোর ইসলামী আইনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে শুরু করে দিয়েছেন ইরানী মহিলারা, সেখানে ভারতের ইসলামিক সহানুভূতিশীলরা ‘হিজাব’কে ব্যক্তিগত ব্যক্তিগত অধিকার এবং ব্যক্তিগত পছন্দ হিসাবে আখ্যায়িত করছেন ।।