জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বর্ধমান,০৪ ফেব্রুয়ারী :করোনা আবহে ২০২১ সালে দু’বার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বন্ধের আশঙ্কাকে সঙ্গী করে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী গত ৩ রা ফেব্রুয়ারি পুনরায় এই রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি আংশিকভাবে চালু হলো। প্রথম দিন কেবলমাত্র অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ক্লাস হয়। সামনে পরীক্ষা থাকায় দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির আশা কার্যত শূন্য এবং অধিকাংশ বিদ্যালয়ে বাস্তবে সেটাই ঘটেছে। জানা যাচ্ছে আগামী ৭ ই ফেব্রুয়ারি ‘পাড়ায় বিদ্যালয়’ এর অঙ্গ হিসাবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে। যদিও প্রাথমিক স্তরের ক্লাস কবে শুরু হবে সেটা এখনো ঘোষণা করা হয়নি। একই সঙ্গে একই দিনে দিল্লি বোর্ড পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও চালু হয় ।
প্রত্যাশা মত প্রথম দিন অধিকাংশ বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ছিল যথেষ্ট কম। ছাত্রছাত্রীদের মুখে ছিল মাস্ক এবং করোনাবিধি মেনে একটি বেঞ্চে দু’জন পড়ুয়াকে বসতে দেখা যায়। দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আকাশ, জেবেউন্নিসা, নবকুমার, নাতাশারা খুব খুশি। আবার ছাত্রছাত্রীদের কাছে পেয়ে শিক্ষককুলও খুব খুশি ।
এর আগেও দু’বার কিছু দিনের জন্য আংশিকভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হয়। কিন্তু করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার জন্য সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। সবার আশা এবার হয়তো আগের ঘটনা ঘটবেনা। প্রাক্ করোনার মত স্বাভাবিক ছন্দে পঠন-পাঠন চলবে।
ক্লিনিকাল সাইকোলজির শিক্ষিকা এবং একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত বিরাটির তানেয়া মুখার্জ্জী বললেন – এটা ঠিকই সবার সঙ্গে মুখোমুখি বসে ক্লাস করার ‘ফ্লেভার’ ডিজিটাল মাধ্যমে পাওয়া যায়না। বাড়িতে বসে বসে ছেলেমেয়েরাও মানসিক সমস্যায় পড়ছে। ছাত্রছাত্রীদের কাছে না পেয়ে একই সমস্যা শিক্ষককুলের। গোটা বিশ্বের ছাত্র সমাজ একই সমস্যায় পড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই একাধিক অভিভাবকরা কাউন্সেলিং এর জন্য তাদের সন্তানদের নিয়ে আমার কাছে আসছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্য উপায়ও নাই। আশা করা যায় বিচ্ছিন্নভাবে না ভেবে নতুন করে যাতে বিপদ না ঘটে তার জন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত নেবে।
বার্ণপুরের জনৈক অভিভাবিকা মামণি দেবী বললেন – মেলা, খেলা বা মদের দোকানে যাওয়াটা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি হওয়াটা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তার দায় কে নেবে? অন্তত এক্ষেত্রে রাজনীতি না করে সরকারের বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সবার মত আমিও চাই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠুক ।
মঙ্গলকোটের একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুর্গাপ্রসন্ন গোস্বামী বললেন – আমরাও চাইছিলাম খুব দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠুক এবং ছেলেমেয়েদের কোলাহলে আবার ভরে উঠুক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। আজ কিছু ছেলেমেয়ে বিদ্যালয়ে আসায় আমরা খুব খুশি। আশাকরি সরস্বতী পুজোর পর উপস্থিতির হার বাড়বে। তবে আমরা ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তার দিকে সতর্ক নজর দেব ।
একই সুর শোনা গেল বর্ধমানের একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে। তিনি বললেন – করোনা পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন কাজে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হয়েছে। কিন্তু করোনার জন্য সন্তান সম ছেলেমেয়েদের আমরা কাছে পাইনি। সবার আগে দরকার ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা। উভয় সঙ্কট সরকারের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর পর কোনো ছেলেমেয়ে করোনায় আক্রান্ত হলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাবে। আবার না চালু হলেও সমস্যা। যাইহোক আমরা সবাই চাই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠুক ।।