জ্যোতিপ্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা,০৩ জানুয়ারী : বাঙালিদের একটা বড় অংশ যখন নতুন বর্ষবরণের আনন্দে মেতে উঠেছে অথবা নতুন বছরের প্রথম দিনে বন্ধুদের সঙ্গে কোথায় পিকনিক করতে যাওয়া হবে সেই পরিকল্পনায় ব্যস্ত ‘ওরা’ তখন প্রচণ্ড ঠান্ডায় এক টুকরো লজ্জা নিবারণের বস্ত্র দিয়েই শীতের হাত থেকে বাঁচবার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। শীতের পোশাক পড়ে, গায়ে লেপ ঢাকা নিয়ে অথবা রুম হিটার জ্বালিয়ে নিজেদের উষ্ণ রাখার মত আর্থিক সামর্থ্য ওদের নাই। রেল স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ডের খোলা বারান্দা অথবা অন্য কোনো খোলা জায়গায় নিদারুণ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ওরা রাত কাটাতে বাধ্য হয়। বাস্তবে ওরা ‘নেই’ রাজ্যের বাসিন্দা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মত গুসকরাতেও একই অবস্থায় ওদের দেখা যায়। গুসকরার বাসিন্দা হিসাবে কলেজ পড়ুয়া ইজাজ বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল।
নতুন বছরের প্রথম দিনে অন্য পাঁচ জনের মত ইজাজ ও তার বন্ধুরা পিকনিকের পরিকল্পনা মোটামুটি করে ফেলেছিল। কিন্তু বিগত বছরের শেষ দিনের আগের দিন ইজাজের মন প্রবল ঠান্ডায় খোলা বারান্দার নীচে রাত কাটানো মানুষগুলোর চিন্তায় উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। নিছক এক দিনের কয়েক ঘণ্টা আনন্দের পরিবর্তে ওদের পাশে দাঁড়ানোর ভাবনা মাথায় আসে। রাতেই নিজের ভাবনার কথা প্রকাশ করে বন্ধুদের কাছে। সঙ্গে সঙ্গেই তার প্রস্তাবে বন্ধুরা রাজী হয়ে যায়। সকালবেলায় পিকনিকের সামগ্রীর পরিবর্তে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী কিনে আনা হয় শীতবস্ত্র ও সামান্য কিছু খাদ্য সামগ্রী। তারপর মধ্যরাতে হারুন-অল-রশিদের মত বন্ধুরা বেড়িয়ে পড়ে গুসকরার বিভিন্ন প্রান্তে ।
একে একে প্রায় পঞ্চাশ জন দুস্থ
মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয় কম্বল, মিষ্টির প্যাকেট ও একটি করে জলের বোতল। শীতের গভীর রাতের জন্য যদিও সর্বক্ষেত্রে তারা হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ পায়নি। কোনো কোনো ঘুমন্ত মানুষের শরীরে কম্বল জড়িয়ে দিয়েছে। পাশে রেখে দিয়েছে খাদ্য সামগ্রী। কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার মানুষরা ।
সদ্য তৃতীয় বর্ষ ‘কমপ্লিট’ করা গুসকরা কলেজমোড় এলাকার বাসিন্দা ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন- আমরা প্রত্যেক বছর হয় পিকনিক নাহয় কোথাও বেড়াতে যাওয়ার মাধ্যমে বছরের প্রথম দিনটা পালন করি। কিন্তু এবছর যাদের ঘরবাড়ি নেই, থাকার জায়গা নেই, কোনো শীতবস্ত্র নেই এই ঠান্ডায় খুব কষ্ট হচ্ছে পিকনিক বন্ধ করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিই। আগামীদিনেও আমরা এই ভাবেই দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াবো। পিকনিক বা বেড়াতে যাওয়ার থেকে এ এক অন্য আনন্দ, অন্য অনুভূতি।।