জ্যোতিপ্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),০২ জানুয়ারী : চারপাশে কংক্রিটের জঙ্গল, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ এবং সঙ্গে সন্তানদের কাছে অভিভাবকদের চাহিদা – সব মিলিয়ে অকালমৃত্যু ঘটছে শৈশবের । দিনের আলো ফোটার আগেই গাড়ির ঘেরাটোপে পাখির মত বন্দী শিশুগুলি ঢুলতে ঢুলতে চলেছে শিশু বিদ্যালয়ে। তখনও ওদের ভাল করে ঘুম ভাঙেনি। বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই পড়ার ঘরে অপেক্ষারত গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়তে বসতে হবে। বিকেলে যে সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে একটু আনন্দ করবে সেই উপায়ও নাই। সেইসব বাড়ির অভিভাবকদের চাহিদাও নিজের বাড়ির মত। তাছাড়া খেলবেই বা কোথায়? লোভী প্রমোটারদের হাতে পড়ে সবুজ খেলার মাঠ আজ ধ্বংসের পথে। গ্রামে একটু আধটু খোলা জায়গা থাকলেও শহরে কার্যত তাও নেই। যেটুকু আছে তাতেও নাই উপযুক্ত পরিকাঠামো। তার উপর আছে যখন তখন অনলাইনে পড়াশোনা । এবার শিশুদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এল গুসকরা পুরসভা ।
গুসকরা শহরবাসীর পক্ষ থেকে দাবি উঠছিল অনেক দিন আগেই । কোনো কোনো শহরে শিশুদের খেলাধুলার জন্য নির্দিষ্ট পার্ক থাকলেও এই শহরের বুকে তার অভাব ছিল। পুরসভার উদ্যোগে এবার সেই অভাবও পূরণ হলো। সবার দাবিকে সম্মান জানিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিনেই ৭ নং ওয়ার্ডে পুরসভা লজ সংলগ্ন পার্কটি শিশুদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পার্কটির নাম দেওয়া হয় ‘খেলা ঘর’। জানা যাচ্ছে সেখানে শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য দোলনা এবং দুটি বোটও থাকবে। শিশুদের নিরাপত্তার জন্য পুরসভার তিন জন কর্মীও থাকবেন। আপাতত বিকেল ৩ টে থেকে ৫ টা পর্যন্ত পার্কটি খোলা থাকবে। একমাত্র শিশুরাই প্রবেশের অধিকার পাবে। তবে প্রবেশের ক্ষেত্রে মহিলা অভিভাবকরা ছাড় পাবে ।
একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পার্কটির উদ্বোধন করেন স্থানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার। তাকে সাহায্য করেন পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কুশল মুখার্জ্জী ও পুরসভার বড়বাবু মধুসূদন পাল। কচিকাচাদের নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পৌর প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারপার্সন গীতারাণী মুখার্জ্জী ও অন্যতম সদস্যা রত্না গোস্বামী, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর দেবাশীষ গোস্বামী, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা গবেষক বলরাম বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশিষ্ট সমাজসেবক মলয় চৌধুরী ও উৎপল লাহা সহ শহরের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি ও অভিভাবিকা। প্রত্যেকেই পুরসভার এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দেবব্রত শ্যাম। তার সঞ্চালনা অনুষ্ঠানটিতে অন্য মাত্রা এনে দেয় ।
পুর কর্তৃপক্ষের ভৃয়সী প্রশংসা করে বিধায়ক বলেন, ‘শিশুদের জন্য সত্যিই এটা মহতী উদ্যোগ। আশাকরি কর্তৃপক্ষ এলাকার মানুষের স্বার্থে এরকম আরও মহতী উদ্যোগ নেবে। তিনি নিজ নিজ শিশুদের পার্কে পাঠানোর জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ করেন। দুষ্কৃতিরা পার্কটির সৌন্দর্য যাতে নষ্ট করতে না পারে সেদিকে নজর দেওয়ার জন্যও তিনি স্হানীয় মানুষদের অনুরোধ করেন। তিনি বলেন – স্হানীয় মানুষের দাবীকে মান্যতা দিয়ে গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির উন্নতির জন্য ইতিমধ্যে সরকারের কাছে কুড়ি কোটি টাকার একটি দাবী পেশ করা হয়েছে। এব্যাপারে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলরাম বাবুর উদ্যোগের তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন ।
অন্যদিকে সর্বক্ষেত্রে বিধায়কের সহযোগিতার প্রশংসা করে কুশল বাবু বলেন – আমরা যেকোন কাজ করার বিষয়ে বিধায়কের কাছে গেলে তিনি শুধু উৎসাহ দেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জায়গায় উপস্থিত থাকেন। ফলে কাজ সম্পাদনার ক্ষেত্রে বাড়তি প্রেরণা পাওয়া যায়। পার্কটির বিষয়ে তিনি যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাস্তবে এরকম একজন বিধায়ক পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। পুরসভার সমস্ত কর্মীর প্রশংসা করার পরেও তিনি অতিরিক্ত প্রশংসা করেন বড়বাবু মধুসূদন পালের। তার সম্পর্কে তিনি বলেন – এরকম একজন মানুষ থাকলে যেকোন কাজ সম্পাদন করা সহজ হয়ে ওঠে ।।