এইদিন ওয়েবডেস্ক,হাওড়া,২৩ ডিসেম্বর : হাওড়া জেলার বালির নিশ্চিন্দার বাসিন্দা গৃহবধু অনন্যা কর্মকার ও রিয়া কর্মকারের আচমকা উধাও হওয়ার রহস্য থেকে পর্দা উঠে গেছে । দুই বধুকে অপহরণের অভিযোগে তাঁদের প্রেমিক মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের বাসিন্দা শেখর রায় ও শুভজিত্ দাসকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । আজ বৃহস্পতিবার ধৃতদের আদালতে তোলা হবে । তার সঙ্গে আদালতে পেশ করা হবে দুই বধুকেও । এরপর দুই বধু কার সঙ্গে ঘর করবেন ? প্রেমিক না স্বামী ? এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে । এদিকে এই ঘটনার পর দুই বধুকে আদপেই আর শ্বশুরবাড়িতে ঠাঁই দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে ।
গত ১৫ ডিসেম্বর শীতের পোশাক কেনার নাম করে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিলেন নিশ্চিন্দার বাসিন্দা কর্মকার পরিবারের ছোটো বউ অনন্যা ও বড় বউ রিয়া । সঙ্গে ছিল রিয়ার সাত বছরের শিশুসন্তান আয়ুষও । তারপর থেকে ওই ৩ জনের কোনও হদিশ পাচ্ছিলেন না তাঁদের পরিবারের লোকজন । শেষে নিশ্চিন্দা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয় । এরপর ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে কর্মকার বাড়িতে নির্মানের কাজে আসা দুই রাজমিস্ত্রি শেখর ও শুভজিতের হাত ধরে ওই দুই বধু মুম্বই চম্পট দিয়েছেন ।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে,সমশেরগঞ্জ থানার নিমতিতার বরজডিহির গ্রামে বাড়ি শেখরের । শুভজিৎ একই থানা এলাকার হাসিমপুরের বাসিন্দা । তাঁরা কাজের সুত্রে ৫-৬ মাস ধরে বালির নিশ্চিন্দাতেই ছিল । ক্রমে অনন্যা এবং রিয়ার সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে । প্রেমালাপের সুবিধার জন্য জন্য শুভজিৎ তাঁদের একটি স্মার্টফোনও কিনে দিয়েছিল বলে খবর । গত ১৫ ডিসেম্বর তারা ওই দুই বধূকে নিয়ে প্রথমে মুর্শিদাবাদে যায় । সেখানে রাত কাটিয়ে মুম্বইয়ে পাড়ি দেয় এক শিশুসহ ৫ জন । সেই কারনে বধু ও ওই শিশুকে উদ্ধারের জন্য মুম্বাই যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল নিশ্চিন্দা থানার পুলিশ । ইতিমধ্যে ফোনে আড়ি পেতে পুলিশ জানতে পারে কাছে থাকা টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় কারনে তাঁরা বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করেছে । তখন থেকেই বধুদের উদ্ধারের পাশাপাশি দুই যুবককে পাকড়াও করতে তক্কে তক্কে থাকে পুলিশ ।
এদিকে বুধবার সকালে মুম্বাই মেল থেকে আসানসোল স্টেশনে নামার পর দুই বধূকে নিয়ে বাসে চড়ে মালদহ হয়ে মুর্শিদাবাদ যাওয়ার ছক কষেছিল শেখর ও শুভজিৎ। কিন্তু তার আগেই আসানসোল জিআরপি-কে সঙ্গে নিয়ে নিশ্চিন্দা থানার পুলিশ এক শিশু-সহ পাঁচ জনকে আটক করে ।
অনন্যাদেবীর স্বামী পেশায় অ্যাকাউন্ট্যান্ট পলাশ কর্মকার জানিয়েছেন, বছর আটেক আগে তাঁদের দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছিল । তাঁদের মধ্যে কোনওদিন কোনও সমস্যা হয়নি । কাজের সুত্রে অধিকাংশ সময় তাঁকে বাইরে থাকতে হত । বাড়ি ফিরতে দেরি হত। তাই বাড়ি ফিরে রোজ নিয়ম করে অনেক রাত পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে তিনি গল্পগুজব করতেন । কিন্তু তাঁর স্ত্রী যে বাড়ির রাজমিস্ত্রির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তা টেরও পাননি বলে সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন পলাশবাবু ।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘জীবনে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছি । কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেল !’ তবে এই ঘটনার পর কি স্ত্রীকে বাড়িতে ঠাঁই দেবেন নাকি ডিভোর্স দেবেন এই বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানাননি অনন্যাদেবীর স্বামী । কিন্তু প্রতিবেশীদের সূত্রে খবর দুই বধূকে আর ফিরিয়ে নিতে রাজি নয় কর্মকার পরিবার । কিন্তু আয়ুষকে তাঁরা ফিরে পেতে চান ।।