এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাঁকুড়া,২০ ডিসেম্বর : বাঁকুড়া জেলার কোতুলপুরের বালিঠ্যা গ্রামের আত্মঘাতী আলু চাষী তাপস কোটালের বাড়িতে ঢোকার আগেই বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কালো পতাকা দেখালো তৃণমূল । সোমবার বিকেলে শুভেন্দু অধিকারী জয়রামবাটি রোড ধরে গ্রামে ঢোকার আগেই স্থানীয় জলিঠ্যা মোড়ে কালো পতাকা দেখানো হয় তাঁকে । আর তার পরেই অ্যাডিশনাল এসপির নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী ব্যারিকেড করে আটকে দেয় শুভেন্দুর কনভয় । এই দেখে ক্ষিপ্ত শুভেন্দু অধিকারী গাড়ি থেকে নেমে সোজা পথ আটকে রাখা পুলিশ আধিকারিকদের কাছে পৌঁছে যান । তিনি বলেন, ‘এখানে কে আছেন পুলিশের দায়িত্বে ? কেন আপনি আমার পথ আটকেছেন ? আপনার কাছে ১৪৪ ধারার অর্ডার আছে? এটা ভারতবর্ষ। এটা কী পাকিস্তান? এটা করাচি? আমি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। আমাকে আটকানোর কোনো অধিকার আপনাদের নেই । গনতন্ত্রকে পুলিশ হত্যা করছে । যে কৃষক আত্মহত্যা করেছে তার বাড়িতে যেতে গেলে বিরোধী দলনেতাকে এরা আটকে দিচ্ছে। এরা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে । এখানে উত্তর কোরিয়ার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ।’ এরপর পুলিশ আধিকারিককে উদ্দেশ্য করে শুভেন্দু বলেন, ‘বাবা-মা পড়াশোনা করিয়েছেন । ট্যাক্সের টাকায় বেতন পান । লজ্জা লাগে না আপনার ? মমতা ব্যানার্জী পড়িয়েছে ? ওর ভাইপো পড়িয়েছে আপনাকে ? বেতন তৃনমূল দেয় ? সেম সেম ।’ তিনি বলেন,’আত্মহত্যা করেছেন এক কৃষক,তাঁর বাড়িতেও যেতে দেবেন না ? কোনও পাবলিক মিটিং নেই । কোনও র্যালি নেই । কোনও মাইকিং নেই । ফ্যামিলির লোকেদের তো সরিয়েছেন । যদিও কাকার ছেলে আমাদের সঙ্গেই আছেন ।’ এরপর তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘নিহত কৃষকের বাড়ি পর্যন্ত এরা যেতে দেবে না । কি করে রেখেছে দেখুন । ঢাল-তলোয়ার- লাঠি- গ্যাস আর মাথায় হেলমেট পড়ে যেন যুদ্ধ করতে এসেছে । অথচ মানুষের উপর যখন অত্যাচার হয় তখন এই লোকগুলোকে পাওয়া যায় না ।’ এরপর শুভেন্দু অধিকারী শ্লোগান তোলেন, ‘পুলিশ তুমি উর্দি ছাড়ো । তৃণমূলের ঝান্ডা ধরো ।”
শেষে জলিঠ্যা মোড় থেকে ফিরে যাওয়ার আগে শুভেন্দু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমি গভর্নরের কাছে যাবো । হাইকোর্টে যাব । কোনও কারন ছাড়াই শুধুমাত্র তৃনমূলের নির্দেশে আমাকে আটকানো হয়েছে ।’ তিনি বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( গ্রামীন) গনেশ বিস্বাসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে শুভেন্দু বলেন,’আপনাকেও আদালতে নিয়ে যাব । আমাকে আপনি চেনেন না । আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো লোক । তিন বার সাংসদ ও তিনবার বিধায়ক হয়েছি । আমি ২০১১ সালের আগে এই বিস্তীর্ণ এলাকায় সিপিএমকে সোজা করেছি । আপনার বয়স কম । মনে রাখবেন বিজেপির অধীনে আপনাকে চাকরী করতে হবে ।’ এদিন শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, ‘বাঁকুড়ার বালিঘাট থেকে ৫ লাখ টাকা করে ভাইপোর জন্য পাঠানো হচ্ছে । প্রতি বালিঘাটে তার জেসিবি মেশিন চলছে ।’
প্রসঙ্গত,গত ১০ ডিসেম্বর বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার বালিঠ্যা গ্রামের বাসিন্দা তাপস কোটাল নামে জনৈক এক কৃষক কীটনাশক পান করেন । তড়িঘড়ি তাঁকে প্রথমে কোতুলপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় । পরে তাঁকে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয় । কিন্তু সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ওই কৃষকের । এরপর গত রবিবার মৃত কৃষকের স্ত্রী চিন্তা কোটালে তৃনমূলের কোতুলপুর ব্লক কার্যালয়ে গিয়ে তৃনমূলে যোগদানের ঘটনা ঘটে । যাকে ঘিরে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতোর । বিজেপি দাবি করে তাপস কোটাল তাঁদের দলের সমর্থক ছিলেন । তাঁর পরিবারকে চাপ দিয়ে তৃনমূলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে বিজেপি । যদিও তৃণমূল পালটা দাবি করে চিন্তা কোটাল নিজের ইচ্ছায় তৃনমূলে যোগ দিয়েছে ।
এদিন শুভেন্দু অধিকারী তাপস কোটালের পরিবারকে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি দলের তরফ থেকে আর্থিক সাহায্য করার জন্য গ্রামে বালিঠ্যা গ্রামে গিয়েছিলেন । কিন্তু তার আগেই শুভেন্দুর কনভয় আটকে দেয় পুলিশ । শেষে গ্রামের অন্যপ্রান্তে গিয়ে নিহত কৃষকের ছবিতে মালা পড়িয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান । সেই সঙ্গে মৃতের ভাইয়ের হাতে দলের তরফ থেকে দু’লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য তুলে দেন শুভেন্দু অধিকারী ।
এদিন বিকেলে বাঁকুড়া আসার আগে দুপুর নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের কুঁয়াপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধান্যঝাটি গ্রামে গিয়েছিলেন শুভেন্দু । সেখানে আত্মঘাতী চাষী ভোলানাথ বায়েনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে তিনি দেখা করেন । সেই সঙ্গে পরিবারের হাতে দলের তরফ থেকে ২ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন ।।