জয়দীপ মৈত্র,দক্ষিণ দিনাজপুর,১২ ডিসেম্বর : বাঙালি বড্ড বেশি ভোজনরসিক । জামাইষষ্ঠীর পর আষাঢ়ের বৃষ্টি শুরু হতেই বাঙালি ছোটে মাছের বাজারে ইলিশের খোঁজে । শারদ উৎসবের শুরু হতেই হেঁসেলে গিন্নি খোঁজেন শীতের সব্জি । ঠিক সেই সময় বিজয়ার নাড়ু নিয়ে ব্যস্ত থাকেন ঠাকুমা দিদিমারা ।শারদ উৎসব পেরোলেই শীতের আমেজ । নতুন ধান ঘরে ওঠার পালা । এবার বাঙালির সন্ধানে আসে খেজুরের রস ও খেজুর গুড় । নভেম্বর মাসের মধ্যে হালকা শীতের আমেজ অনুভূত হয় । ধীরে ধীরে শীত জাঁকিয়ে পড়তে থাকে। মাঝে মাঝে আকাশ মেঘলা থাকায় শীতের কনকনে ভাব হাড়ে হাড়ে টের পায় মানুষজন।
সেইসময় আপামর বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠে পুলির অনুষ্ঠান। সেই পিঠে-পুলি তৈরিতে চাই নলেন গুড়। হরিরামপুর ব্লকের বরভিটা গ্রামের সুরেশ সরকার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে সেই রস জাল দিয়ে নলেন গুড় তৈরি করেন । প্রতি বছরই খেজুর গাছ থেকে রস বের করে নলেন গুড় তৈরি করেন বছর ৫০-এর সুরেশ বাবু। তিনি প্রায় ৮ বছর ধরে এই কাজ করে আসছেন বলে জানান ।
সুরেশবাবু বলেন, ‘প্রতি বছর ১৪ থেকে ১৫ টি খেজুর গাছ কিনে নিতে হয়। সেই গাছ থেকে রস নেবার পর কমপক্ষে সাতদিন বিশ্রাম দিতে হয়, একে বলে শুকি । এই শুকি না দিলে খেজুর রসের স্বাদ থাকবে না, ফলে নলেন গুড়ের স্বাদও কমে যাবে ।’ সুরেশবাবুর এই গুড় তৈরির কাজে হাত লাগান তাঁর দুই ছেলে উত্তম ও শুভ।
নলেন গুড় তৈরির পর তা বাজারজাত করার জন্য তিনি ছোটেন সরাইহাট, হরিরামপুর হাট, পাতিরাজ হাটসহ বিভিন্ন এলাকার বাজারে । কেজি প্রতি নলেন গুড় বিকোয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে । সুরেশবাবু বলেন, ‘বর্তমানে অনান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া হলেও গুড়ের দাম সেভাবে পাওয়া যায় না । তার উপর গত দু’বছর ধরে চলতে থাকা করোনা মহামারীর জেরে ব্যবসায় অনেকটা মন্দা থাকার ফলে লক্ষীর ভাঁড়ে টান পড়েছিল ব্যবসায়ীদের । তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই এই শীতের সময় ফের নলেন গুড়ের ব্যবসায় লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা ।’
এলাকাবাসী বিমান হালদার জানা, সুরেশবাবুর তৈরি নলেন গুড়ের সুখ্যাতি আছে এলাকায় । যার জন্য আশপাশের এলাকা থেকে মানুষজন সুরেশবাবুর বাড়িতে আসেন গুড় কিনতে ।’ এদিকে গত দু’দিন ধরে চলতে থাকা উত্তুরে ঠান্ডা কনকনে হাওয়া উত্তরবঙ্গ জুড়ে জাঁকিয়ে ঠান্ডার থাবা ফেলেছে । তার রেশ পাওয়া যাচ্ছে হাড়ে হাড়ে। কনকনে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে জবুথবু মানুষ মজেছে নলেন গুড়ের স্বাদে । পৌষ পার্বন দেরি থাকলেও ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে নলেন গুড়ের পায়েস পিঠা ।।