দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১২ ডিসেম্বর : কনেকে সাজানোর কাজ শেষ করার পর জনৈক এক যুবকের বাইকের পিছনে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন পেশায় বিউটিশিয়ান বছর ৩৮-এর এক গৃহবধু । কিন্তু মাঝ রাস্তাতে বাইকের পিছনের চাকায় জড়িয়ে যায় বধুর ওড়নাটি । তারপর চলন্ত বাইক থেকে উলটে পড়ায় মর্মান্তিকভাবে তাঁর মৃত্যু হয় । শনিবার রাতে দূর্ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার ভূমশোড়ের ক্যানেল পুলের কাছে বর্ধমান- কাটোয়া রাজ্য সড়ক পথে । পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম বুলা সামন্ত রায় । রবিবার মৃতদেহটি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয় । মর্মান্তিক এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ পরিবার পরিজন ও প্রতিবেশীরা ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,বুলা সামন্ত রায় নামে ওই গৃহবধূর বাপের বাড়ি ভাতার থানার তুলসিডাঙ্গা গ্রামে । কোশিগ্রামের বাসিন্দা পেশায় ব্যাবসায়ী অশোক সামন্তর সঙ্গে ২০১৬ সালে তাঁর দেখাশোনা করে করে বিয়ে হয় । কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়ার কারনে পৃথক থাকতেন বুলাদেবী ।
জানা গেছে,বুলাদেবীর বাবার বহুদিন আগেই মৃত্যু হয়েছে । বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা মা সুধারানী রায় ও অবিবাহিতা দিদি সুজাতা রায় । মা ও দিদিকে নিয়ে ভাতার বাজারের রামকৃষ্ণ পল্লির একটি বাড়িতে তিনি ভাড়া থাকতেন । বুলাদেবী বিউটিশিয়ানের কাজ করতেন । মূলত সেই রোজগারেই তাঁদের তিনজনের সংসার চলতো ।
জানা গেছে,বলগোনা বাজারে বুলাদেবীর একটি বিউটিপার্লার রয়েছে । এছাড়া ভাতার বাজারেও একটি পার্লার খোলার জন্য তিনি ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন । কিন্তু ওই বিউটিপার্লারটি উদ্বোধনের আগেই পথ দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে তাঁর মৃত্যু হয় ।
স্থানীয় ও পরিবার সুত্রে জানা গেছে,শনিবার রাতে ভাতার থানার শিকোত্তর গ্রামের বাউরি পাড়ায় একটি বিয়ে বাড়িতে কনেকে সাজানোর জন্য গিয়েছিলেন বুলাদেবী । রাত্রি প্রায় ৯ টা নাগাদ তরুন মণ্ডল নামে এক যুবক তাঁর বাইকে চাপিয়ে বুলাদেবীকে বাড়ি পৌঁছে দিতে আসছিলেন । কিন্তু বাইকটি ভূমশোড় ক্যানেল পুলের কাছে আসতেই বুলাদেবীর ওড়নার একাংশ জড়িয়ে যায় বাইকের পিছনের চাকায় । টান পড়তেই তিনি চলন্ত বাইক থেকে ছিটকে রাস্তার উপরে এসে পড়েন । তাঁর মাথার পিছন দিকে গুরুতর আঘাত লাগে ।
জানা গেছে, সেই সময় ভাতারের মুখে আসছিল একটি মারুতি ভ্যান । ওই মারুতি গাড়িতে করে বধুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে আনা হয় । সেখান থেকে তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় । কিন্তু বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় ওই বধুর । পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য হওয়ায় বুলাদেবীর মৃত্যুর পর অসহায় হয়ে পড়েছেন তাঁর বৃদ্ধা মা ও অবিবাহিতা দিদি ।।