জয়দীপ মৈত্র,দক্ষিণ দিনাজপুর,১১ ডিসেম্বর : বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী লাগোয়া জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর । কৃষি প্রধান জেলা হিসাবেই পরিচিত এই জেলা । দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কৃষকরা মূলত ধান, পাট, গম ও সরষে চাষ করে থাকেন । তবে বছর খানেক ধরে গাঁদা ফুলের চাষ করেও লাভের মুখ দেখছেন জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের শিববাড়ি এলাকার চাষিরা । আগে অনান্য ব্লকের মত এখানেও মূলত ধান, পাট, গম ও সরষের চাষই করতেন চাষিরা । দিনদিন এই সব ফসলের দাম কমায় ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁরা বিকল্প চাষের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছিলেন । শেষ পর্যন্ত গাঁদা ফুলের চাষকেই তাঁরা বেছে নিয়েছেন । আর এই চাষ করে শুধু তাঁরা নিজেরাই লাভবান হচ্ছেন না,অনান্য কৃষকদের বিকল্প চাষে দিশা দেখাচ্ছেন ।
কয়েক বছর আগে এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক প্রথমে গাঁদাফুল চাষের সিদ্ধান্ত নেন । প্রথম দিকে তাঁরা অল্প জমিতে শুরু করেন এই চাষ । নদিয়ার রাণাঘাট থেকে গাঁদা ফুলের চারা নিয়ে আসেন এখানকার কৃষকরা । আশ্বিন মাসে জমি তৈরি করে চারা বোনা হয় । সব মিলিয়ে খুব বেশি হলে একবিঘা জমিতে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয় বলে জানিয়েছেন চাষিরা । ফুল বিক্রি হয় দ্বিগুণ দামে । ভালো উৎপাদন হলে লভ্যাংশ অনেকটাই বাড়ে । ধান, গম, পাট বা ভুট্টা চাষের তুলনায় এই চাষে লাভের হার অনেকটাই বেশি । আর শীতকালে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাঁদা ফুলের চাহিদাও অনেক বেশি থাকে । তাই শীতের মরশুমে দামও ভালো পাওয়া যায় ।
স্থানীয় চাষী বিষ্ণুপদ সরকার জানান, তাঁর সামান্য কিছু জমি ছিল । সেই জমি ও অন্যের কাছ থেকে কিছুটা জমি ভাগে নিয়ে তাতে তিনি গাঁদা ফুলের চাষ করেছেন । চারা পিছু দাম পড়েছে ২৫ পয়সা করে । অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তিনি বাজারে ফুল বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘একবিঘা জমিতে চাষ করতে ১২-১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে । এই টাকা এক মাসেই উঠে এসেছে । আমার দেখাদেখি আরও অনেক কৃষক গাঁদাফুল চাষ শুরু করে দিয়েছেন ।’
প্রসঙ্গত,এরাজ্যের চাষিরা সাধারণ চিরাচরিত পদ্ধতিতে ধান চাষ করে থাকেন । কিন্তু যথাযথ উৎপাদন না হওয়া,উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও ধানের সঠিক মূল্য না পাওয়ার কারনে তাঁরা কোনও বছরেই সেভাবে লাভের মুখ দেখতে পান না । এদিকে বিগত দু’বছর করোনা মহামারীর কারনে কৃষকদের অর্থনীতির উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল । কৃষকদের এই পরিস্থিতির কথা ভেবে বহু বছর থেকেই চাষে আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ ও বিকল্প চাষে উৎসাহিত করে আসছে কৃষি দপ্তর । তা সত্ত্বেও সিংহভাগ কৃষককে চিরাচরিত পদ্ধতিতে ধান চাষ থেকে বিরত করা যায়নি । কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি দেখে কৃষি দপ্তরের পরামর্শ মেনে বিকল্প চাষ শুরু করে দিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের শিববাড়ি এলাকার কৃষকরা । আর এতে তাঁরা লাভের মুখও দেখছেন । জীবন যাপনের মান উন্নয়ন হচ্ছে ওই সমস্ত কৃষক পরিবারের ।।