প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১০ ডিসেম্বর :চিটফান্ড প্রতারণা মামলায় এবার বর্ধমান পৌরসভার প্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করলো সিবিআই । বর্ধমান সানমার্গ ওয়েলফে ট্রাস্ট নামের একটি বেসরকারী অর্থলগ্নীকারী সংস্থা থেকে ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল তাঁকে গ্রেপ্তার করে । তৃণমূল কংগ্রেস নেতা প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে চার মাস আগে বর্ধমান পৌরভার প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করে রাজ্য সরকার ।চিটফান্ড প্রতারণা মামলায় এদিন প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে বর্ধমানের রাজনৈতিক মহলে বর্ধমান পৌরসভার প্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায় কে এবিন গ্রেফতার করেই খান্ত হনন নি সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসাররা ।তাঁরা এদিন প্রণব বাবুর বাড়িতেও তদন্তে যান । প্রণববাবুর স্ত্রী রেখাদেবীর সঙ্গেও কথা বলেন । পরে এদিন বিকালের দিকে শহর বর্ধমানের ঢলদিঘী এলাকায় থাকা প্রণব বাবুর অফিস বিল্ডিংয়েও সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল তদন্তে যায় ।
প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রেখাদেবী বলেন, তাঁর বাড়িতে সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল এসেছিল।তারা সানমার্গ সংস্থা নিয়ে তদন্ত করছে।রেখাদেবী জানান,তাঁদের একটি বিল্ডিংয় বর্ধমান সানমার্গ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট কিছুদিনের জন্য ভাড়া নিয়েছিল ।আমরা জানতাম না ওরা প্রকৃত কিসের ব্যবসা করে । টেক্সটাইল করবে বলে তারা তাঁর স্বামকে বলেছিল । কিন্তু ওরা (সানমার্গ সংস্থা) যখন রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা সুরু করে তখন তাঁর স্বামী ওদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। রেখাদেবী দাবি করেন , এর বাইরে আর বিশেষ কিছু জানেন না ।সেই কথা তিনি সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারদেরও জানিয়ে দিয়েছেন ।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে ,অন্যান চিটফাণ্ড সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারী অর্থলগ্নীকারী সংস্থা বর্ধমান সানমার্গ ওয়েলফের ট্রাস্টের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি নিয়েও তদন্ত চালাচ্ছিলেন সিবিআইরের তদন্তকারী অফিসাররা । তদন্ত চালাোর সময়ে তাঁরা বর্ধমান সানমার্গ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা শুরু করেন। তখনই সিবিআই অফিসাররা জানতে পারেন সানমার্গ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক বার প্রণব চট্টোপধ্যায়ের ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার হয়েছে । সব মিলিয়ে প্রণববাবুর এ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হওয়া টাকার পরিমাণ ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা । এত বিশাল পরিমাণ টাকা প্রণববাবুকে দেওয়ার কারণ কি ছিল তা জানার জন্য সিবিআই অফিসাররা একাধীক সাক্ষী ছাড়ায় সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন । তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসাররা জানতে পারেন বিভিন্ন কাজ করিয়ে দেওয়া ,লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়া ও ব্যবসার জন্য বিল্ডিং পাইয়ে দেবার আশ্বাস দিয়ে প্রণব চট্টোপাধ্যায় এত টাকা নিয়েছিলেন । কিন্তু টাকা নিয়েও কোন কাজ না করে তিনি সংস্থাটির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন । সিবিআইয়ের দাবী এই আর্থিক প্রতারণার মামলাতেই বৃহস্পতিবার প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে ।
এদিনই সিবিআইয়ের তরফে ধৃতকে পেশ করে আসানসোলের সিবিআই আদালতে । ওই বেসরকারী অর্থলগ্নীকারী সংস্থা থেকে আরও কারা কারা টাকা নিয়েছিল এবং সেই টাকা কোথায় সারানো হয়েছে সেই সব তথ্য উদ্ধারের জন্য ধৃত প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানান সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার । সিবিআই আদালতের বিচারক প্রণব চট্টোপাধ্যায় কে ৪ দিন সিবিআই হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ।
বর্ধমান পৌরসভার প্রশাসককে সিবিআইয়ের গ্রেফতার করা প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপত্র দেবু টুডু বলেন ,“১৪ বছর আগের ঘটনা । কে টাকা দিয়েছে, কাকে টাকা দিয়েছে তার কোন প্রমাণ নেই । অথচ প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হল । রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই সিবিআইকে দিয়ে প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করানো হয়েছে বলে দেবু টুডু দাবী করেছেন । অপর দিকে তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন ,’কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্তে সিবিআইকে ব্যবহার করে প্রণববাবুকে গ্রেফতার করা হল কিনা সেটারও তদন্ত হওয়া উচিত’ ।
যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের কটাক্ষ করে বিজেপি জেলা সদরের সম্পাদক শ্যামল রায় বলেন ,তৃণমূল কংগ্রেস দলের নেতারা কেউ এখন জেলে আবার কেই বেলে আছেন । চিটফাণ্ড প্রতারণা কাণ্ডে পৌর প্রশাসকের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা লজ্জিত ঐতিহ্যের শহর বর্ধমানের শিক্ষিত মানষরা। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে বর্ধমানবাসী এইসবের জবাব দিয়ে দেবে ।।