প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ ডিসেম্বর : বিধায়ক হলেও তিনি চাষি পরিবারের সদস্য। তাই বুধবার কৃষকের ভূমিকাতেই নিজেদের চাষের জমিতে সারাটা দিন শ্রম দিলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর বিধানসভার বিধায়ক অলোক মাঝি। নিম্নচাপের বৃষ্টির জলে ডুবে যাওয়া নিজেদের জমির কাটা ধান গাছ জল থেকে উদ্ধার করে তিনি তুলে রাখলেন পাড়ে । বিধায়ক হলেও চাষি পরিবারের ছেলের নিজেদের চাষের জমির প্রতি টান রয়ে যাওয়া দেখে খুশি বিধায়কের মা শান্তিদেবী। তিনি চান তাঁর ছেলে যেন এই ভাব ধারাকেই আঁকড়ে থাকে ।
বিধায়ক অলোক মাঝির বাড়ি জেলার খণ্ডঘোষ থানার কৈয়র গ্রাম পঞ্চায়েতের শংকরপুর গ্রামে।তিনি শুধু বিধায়কই নন ,পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি ও তিনি ।বিধায়কের পরিবারের সকলেই কৃষিজীবী। বাবা প্রয়াত হবার পর পারিবারিক চাষবাসের বিষয়টি দেখাশুনার দায়িত্ব পড়ে অলোক মাঝির উপরে । তিনিই দায়িত্ব নিয়ে প্রতিবছর নিজেদের বিঘা দুয়েক জমিতে ধান চাষ করান ।এইবছর তিনি তাঁদের জমিতে সুগন্ধী ধানের চাষ করেছিলেন । পাকা ধান গাছ কেটে জমিতে বিছিয়ে রাখা ছিল । জমিতে পড়ে থাকা কাটা ধান গাছ বাড়ির খাবারে নিয়ে যাবার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়ে ছিলেন । কিন্তু জাওয়াদের প্রভাবে সম্প্রতি টানা দু’দিন ধরে চলা বৃষ্টির জলে তাঁদের সুগন্ধী ধানের জমি জলে ডুবে যায় ।আর তার কারণেই জেলার অন্যান ব্লকের চাষিদের মত বিধায়ক অলোক মাঝির পরিবারের সদস্যদেরও মাথায় হাত পড়ে যায় ।নিজের বিধানসভা এলাকায় চাষিদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে নিজের জমিতে জলে ডুবে থাকা ধান গাছ আর জল থেকে পাড়ে তোলা হয় নি । অথচ তাঁর বসতি এলাকার সব চাষিরাই দিন রাত এক করে নিজেদের জমিতে পড়ে থাকা কাটা ধান গাছ পাড়ে তুলে কিছুটা হলেও পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । তাই আর দেরি না করে বিধায়ক অলোক মাঝিও এদিন একই পথে হেঁটে নিজেই নিজেদের জমিতে পড়ে থাকা কাটা ধানগাছ জল থেকে পাড়ে তোলার কাজ করেন ।
অলোক মাঝি বলেন ,তিনি চাষি পরিবারের
সন্তান। তাই বিধায়ক লেও তাঁর বাবা প্রয়াত হবার পর তাঁকেই তাঁদের পরিবারের জমিজমা চাষের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে। তাঁদের সুগন্ধী ধানের জমি বৃষ্টির জলে ডুবে যাওয়ায়
তাঁর বৃদ্ধা মা শান্তিদেবী সহ পরিবারের সবাই
দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যান । অনেক খরচ করে সুগন্ধী ধানের চাষ করেছিলেন । এখন তাঁদের গ্রামের সকল চাষি নিজেদের জমির কাটা ধান গাছ পাড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত । সেই কারণে এদিন তিনি নিজেই জমিতে নেমে যতটা পেরেছে জলে ডুবে থাকা কাটা ধান গাছ জমি থেকে পড়ে তুলে রেখেছেন । জলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য ধান হয়তো আর তেমন মিলবে না ।তবু যতটুকু ধান মিলবে সেটাই তাঁদের পরিবারের অন্ন সংস্থানে সহায়ক হবে বলে অলোক মাঝি মন্তব্য করেছেন ।শান্তিদেবী বলেন ,“তাঁর ছেলে বিধায়ক হলেও সে চাষি পরিবারেরই ছেলে । সেই কথা যে তাঁর ছেলে ভোলেনি । সেটাই তাঁর কাছে গর্বের বিষয় ।’।