প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০২ ডিসেম্বর : প্রশাসন নড়ে চড়ে বসায় শেষপর্যন্ত সারের অতিরিক্ত দাম নেওয়া অর্থ চাষিদের ফেরৎ দিতে বাধ্য হলেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লক প্রশাসনের উপস্থিতিতে কয়েকজন সার ব্যবসায়ী ৮ -১০ জন চাষির হাতে ওই অর্থ তুলে দেন। প্রশাসন পাশে দাঁড়ানোয় খুশি চাষিরা।তবে এদিনের এই ঘটনা প্রমাণ করেদিল রাসায়নিক সারের কালোবাজারি হচ্ছে বলে চাষিরা যে অভিযোগ করে আসছিলেন তা মোটেই অমূলক ছিল না । আলু চাষের কাজ শুর হতেই রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন ব্লক থেকে রাসায়নিক সারের কালোবাজারির অভিযোগ উঠে আসতে শুরু করে । যেহেতু জেলার জামালপুর, মেমারি ,রায়না এবং বর্ধমান ১ ও ২ ব্লকে আগে আগে আলু চাষ শুরু হয় তাই এখানকার চাষিরা সারের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সরব হন। শুধু তাই নয় ,ভরা আলু চাষের মরসুমে সারের কালোবাজারি শুরু হওয়ায় অসন্তোষ বাড়তে শুরু করে চাষি মহলে ।সারের কালোবাজারির বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন ও কৃষি দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মেমারির দেবীপুরের নিশিরাগড়ের চাষিরা । পাশাপাশি জামালপুর ব্লকের চকদিঘী,জামালপুর ২, জ্যোৎশ্রীরাম ও জাড়গ্রাম অঞ্চলের চাষিরাও আলু চাষের রাসায়নিক সারের দাম ব্যবসায়ীরা নেওয়ায় প্রতিবাদে সরব হন ।চাষিরা অভিযোগ করেন ,আলু চাষের জন্য মূলত ’ইউরিয়া’ ও ’এন- পি -কে ১০ঃ২৬ঃ২৬’ রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় । সেই সার কেনার জন্য তারা এলাকার সার ব্যবসায়ীর কাছে গেলে ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছ থেকে এক বস্তা ‘এন-পি-কে ১০ঃ২৬ঃ ২৬‘ “পরস“ সারের দাম নেয় ১৭ শো টাকা । এত টাকা দাম নিয়ে ব্যবসায়ীরা ক্যাশমেমো দেন না। পরে সারের প্যাকেট হাতে পাওয়ার পর তাঁরা দেখেন তাতে বিক্রী মূল্য(এমআরপি) লেখা রয়েছে ১৪৭০ টাকা। চাষি মহল থেকে এমন অভিযোগ উঠে আসার পরেই জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে জেলা জুড়ে অভিযানে নামে কৃষি দফতর ও প্রশাসন । আর অভিযান চালিয়েই বাগে আনা যায় সারের কালোবাজারীদের ।
জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার এদিন বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তিনি এবং ব্লক কৃষি আধিকারিক ,জামালপুর থানার ওসি,পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সবাই মিলে গত দুদিন ধরে বিভিন্ন সারের দোকানে অভিযান চালান । ’ই- পস ’ মেশিনের মাধ্যমে দোকানগুলিতে সারের যে স্টক উঠে আসে তার সঙ্গে গোডাউনের বর্তমান স্টক যাচাই করে দেখা হয় । অভিযান চলার সময়েই জামালপুর ২, চকদিঘী ও জাড়গ্রাম অঞ্চলের ৮-১০ জন চাষি সেখাকার বেশ কয়েকজন সার ব্যবসাষীর বিরুদ্ধে সারের দাম বেশী নেওয়ার অভিযোগ করেন । যে যে ব্যবসায়ী চাষিদের কাছ থেকে সারের দাম যতটা বেশী নিয়েছিলেন সেই অর্থ ওইসব চাষিদের ফেরৎ দিতে বাধ্য করানো হয় । বিডিও এদিন কার্যত স্বীকার করেনেন সারের কালোবাজারী হচ্ছে বলে চাষিদের আনা অভিযোগ অমূলক ছিল না।তাই সারের দাম বেশী নেওয়া ব্যবসায়ীদের ’শো- কজ ’করা হয়েছে ।ওই ব্যবসায়ীরা ’শো-কজের ’ যে জবাব দেবেন তা সন্তোষজন না হলে তাঁদের লাইসেন্স ২১ দিনের জন্য বাজেয়াপ্ত করা হবে । এই সংক্রান্ত মেসেজও ওই সব ব্যবসায়ীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বিডিও জানিয়েছেন ।পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় এখন কটা দিন আলু চাষের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত হওয়ার আবেদন রেখেছেন বিডিও ।।