শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),০১ ডিসেম্বর : ৬ শাবকের জন্ম দেওয়ার পর পাশের গ্রামে খাবারের সন্ধানে গিয়েছিল একটি কুকুর । কিন্তু সেখানে কেউ তাকে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দেয় । ওই খাবার খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই কুকুরটির মৃত্যু হয় । এদিকে অসহায় হয়ে পড়ে ওই কুকুরের বাচ্ছাগুলি । খিদের টানে তারা চিল চিৎকার শুরু করে দেয় । তা দেখে থাকতে পারেননি পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর ব্লকের পিপলন পঞ্চায়েতের ছোট জুগ্ৰামের বাসিন্দা অজয় ঘোষ নামে এক প্রৌঢ় । তিনি কুকুর শাবকগুলোকে সযত্নে নাম নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন । এখন মৃত কুকুরের শাবকগুলির পরিচর্যার জন্য সব কাজকর্ম ফেলে রেখে বাড়িতেই দিন কাটাচ্ছেন পেশায় ভাগচাষী অজয়বাবু । ওই প্রৌঢ়ের মানবিকতার ভুয়সী প্রশংসা করেছেন গ্রামবাসীরা ।
জানা যায়,ছোট জুগ্ৰামের বাসিন্দা অজয় ঘোষ অন্যের জমি ভাগে নিয়ে চাষ করেন । তা থেকে খুব সামান্য উপার্জন হয় । স্ত্রী বেশ কয়েক বছর আগে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন । তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে । মেয়ের বিয়ে হয়েছে পাশের বামুনিয়া গ্রামে । ছেলে কলকাতায় একটি কোম্পানীতে কাজ করেন ৷ কর্মসুত্রে তিনি সেখানেই থাকেন । বাড়িতে একাই থাকেন অজয়বাবু । চাষবাসের সামান্য উপার্জনে কোনও রকমে তাঁর দু’বেলার অন্ন সংস্থান হয় ।
অজয় ঘোষ বলেন, ‘আমাদের পাড়ায় একটি স্ত্রী কুকুর ছিল । কুকুরটি দিন ছয়েক আগে ৬ টি শাবকের জন্ম দেয় । কিন্তু দিন দুয়েক আগে ওই কুকুরটিকে পাশের বরজুগ্রামের রাস্তার ধারে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় । মনে হয় কেউ খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল,তাই খেয়েই কুকুরটি মারা গেছে । এদিকে মা মারা যাওয়ায় কয়েকদিন ধরে কুকুর ছানাগুলো কিছু খেতে পায়নি । তাই কুকুর ছানাগুলোকে বাঁচানোর জন্য আমি ওদের আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছি ।’ তিনি জানিয়েছেন,কুকুর শাবকগুলো এখনও নিজে খেতে শেখেনি । দুধ, পাউরুটি এনে খাওয়াতে হচ্ছে । মঙ্গলবার থেকে তারা অল্পঅল্প করে দুধভাত খেতে খেতে পারছে বলে জানিয়েছেন অজয়বাবু ।
জানা গেছে,শুধু সারাদিনে নিয়ম করে খাবার খাওয়ানোই নয় । সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৬ টি কুকুর শাবকের সঙ্গে কাটাচ্ছেন ওই প্রৌঢ় । প্রৌঢ়ের বিছানাতে লেপের তলায় তাদের আরামে রাত কাটছে । শাবকগুলো ঘরে মল,মুত্র ত্যাগ করলে অপত্য স্নেহে তা পরিষ্কার করছেন অজয়বাবু । তাঁর কথায়, ‘ওই শিশুগুলোর মা মরে গেছে । আমিও যদি এড়িয়ে যাই তাহলে কে দেখাশোনা করবে ওদের ? আমি বাড়ির বাইরে কোথাও গেলে কুকুরগুলো চিৎকার জুড়ে দিচ্ছে । তাই সব কাজ ফেলে ওদের সঙ্গে দিন কাটাচ্ছি । ওরা একটু বড় হলেই আবার যথারীতি কাজকর্ম শুরু করব ।’
এদিকে আমন ধান কাটার মরশুম চলছে । কিন্তু কুকুর শাবকগুলোর পিছুটান থাকায় ধান কাটার কাজ শুরু করতে পারেননি অজয়বাবু । যদিও তিনি জানিয়েছেন, দু’চারদিনের মধ্যেই ধান কাটার কাজ শুরু করবেন। তখন কুকুর ছানাগুলোও একটু বড় হয়ে যাবে । মন্তেশ্বর ব্লকের পিপলন পঞ্চায়েতের ছোট জুগ্ৰামের বাসিন্দা অজয় ঘোষের এহেন পশুপ্রেম নজির সৃষ্টি করেছে এলাকায় ।।