প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০১ ডিসেম্বর : তেরো বছর আগে মহাসপ্তমীর দিন ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে টাটাসুমো সহ ক্যানেলের জলে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল একই পরিবারের ১০ সদস্যের ।এই মৃত্যুর ঘটনায় জন্য টাটা সুমোর চালককে দোষী সাব্যস্ত করে মঙ্গলবার তাঁকে ১ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল বর্ধমান আদালত । সাজাপ্রাপ্তের নাম সুকুমার নন্দন। তাঁর বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার বাঙালপাড়ায় । গাড়ি চালানোয় গাফিলতিতে মৃত্যুর কারণে ১ বছর এবং বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর জন্য আরও ৪ মাস টাটাসুমো চালক সুকুমারকে জেল খাটতে হবে। দু’টি সাজাই একসঙ্গে চলবে।এছাড়াও গাফিলতিতে মৃত্যুর দায়ে ৫ হাজার টাকা এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য ১ হাজার টাকা চালককে জরিমানা করেছে আদালত । জরিমানার টাকা পরিষোধ না করলে প্রথমক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৩ মাস ও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ১ মাস সাজা খাটতে হবে চালককে। বর্ধমানের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ এদিন এই সাজা ঘোষণা করেছেন।
কেসের সরকারি আইনজীবী কমলকৃষ্ণ তা জানিয়েছেন, ২০০৮ সালের ৬ অক্টোবর দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন রাতে জামালপুর থানার পাঁচড়া গ্রামের রক্ষিত পরিবারের ১০ জন টাটা সুমোয় চেপে ঠাকুর দেখতে বের হন। রাত ১১টা ১৫ নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। তারকেশ্বর-মেমারি রাস্তায় যাওয়ার সময় চৌবেড়িয়ায় বডিভিসি সেচখালে ব্রিজে টাটা সুমোটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে। এরপর আরহী সহ সুমোটি ক্যানেলের জলে পড়ে যায়। চালক অবশ্য জলে ঝাঁপ দেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা এসে উদ্ধারকাজে হাত লাগায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। জল থেকে অরিন্দম রক্ষিত (২১), সুতিকা রক্ষিত (১০), ঋত্বিকা রক্ষিত (৯), রুমা রক্ষিত (৩৪), বিদ্যুৎলতা রক্ষিত (৩৪), সৌম্য রক্ষিত ওরফে অয়ন (১৯), অসীম রক্ষিত (৪০), অনন্যা রক্ষিত (১৮) ও তপতী রক্ষিত (৩৫)-এর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার বিষয়ে জামালপুর থানার মাঠ নসিপুরের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান মল্লিক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, ব্রিজের ক্ষতি করা ও গাফিলতিতে মৃত্যুর ধারায় মামলা রুজু হয়। পুলিস ৯ অক্টোবর টাটা সুমোর চালককে গ্রেপ্তার করে। ২৫ অক্টোবর সে জামিন পেয়ে যায়। তদন্ত সম্পূর্ণ করে পুলিস বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো ও গাফিলতিতে মৃত্যুর ধারায় চালকের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে। কিন্তু, এতে সন্তুষ্ট না হয়ে মৃতদের পরিবারের তরফে দিলীপ রক্ষিত আদালতে মামলা করেন। হাইকোর্ট ৩১৯সিআরপিসির ধারায় দায়রা আদালতে আবেদন করার জন্য নির্দেশ দেয়। সেইমতো আদালতে আবেদন করেন দিলীপ রক্ষিত। দায়রা আদালতের বিচারক মামলায় টাটা সুমোর মালিকের নাম যুক্ত করার জন্য নির্দেশ দেন এবং মামলায় জেনেবুঝে মৃত্যু ঘটানোর ধারা যুক্ত হয়। বিচার চলাকালীন আদালত টাটা সুমোর মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারির নির্দেশ দেন। সেইমতো ২০১৮ সালের ১২ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন সুমোর মালিক। সেদিনই তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়। মামলায় মোট ২২ জন সাক্ষ্য দেন। দুর্ঘটনার পর টাটা সুমোটির মেকানিক্যাল টেস্ট করানো হয়। মোটর ভেহিকেলস্ ইনসপেক্টর সুজয় দাস গাড়িটি পরীক্ষা করে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি পাননি। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর জন্য দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্ট জমা পড়ে। সাক্ষীদের বয়ানেও একই তথ্য উঠে আসে ।
সাজাপ্রাপ্তর আইনজীবী কুমারজিৎ নায়ক বলেন, সাজার মেয়াদ ৩ বছরের কম । তাই উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়ে আদালতে চালকের জামিনের আবেদন করেন । বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করায় এখনই সুকুমার নন্দনকে জেলে যেতে হচ্ছে না । এছাড়াও গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে চালক যতদিন জেলে ছিল তা সাজার মেয়াদ থেকে বাদ যাবে ।।