প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১০ এপ্রিল : একবার নয়,একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নদ-নদীতে অবৈধ বালি খাদান খুলে বালি পাচার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন । কিন্তু তার পরেও দৌরাত্ম্য বন্ধ করেনি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বালি মাফিয়ারা । তারা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ও গ্রীন ট্রাইবুনালের রায়কে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই অবৈধ বালি খাদান চালাচ্ছিল জামালপুর থানার সারাংপুর বাঁশতলা এলাকায় । চাষের জমির কাছাকাছি ওই অবৈধ বালি খাদান চলতে থাকায় চাষিরা প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন । কিন্তু বালি মাফিয়ারা চাষিদের প্রতিবাদকে পাত্তা না দিয়ে বালি লুঠ চালিয়ে যায়। সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কয়েক মাস যাবৎ সারা দিন রাত ওই অবৈধ খাদান থেকে চলছিল বালি লুঠ। তবে চাষিদের প্রতিবাদ জোরদার হতে শুরু করায় বালি মাফিয়ারা দীর্ঘ দিন আর ওই অবৈধ খাদান আর চালাতে পারলো না ।
চাষিদের প্রতিবাদকে মান্যতা দিয়ে জামালপুর থানার ওসি রাকেশ সিং এর নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী শুক্রবার গভীর রাতে সারাংপুরের ওই অবৈধ বালি খাদানে অভিযান চালায়। পুলিশ দেখেই ওই অবৈধ খাদানে থাকা একের পর এক ডাম্পারের চালক ও খালাসী এবং জেসিবি মেসিনের চালক জেসিবি ছেড়ে পালায় । পুলিশ ওই অবৈধ খাদান থেকে ৯ টি
বালি বোঝাই ডাম্পার ও জেসিবি মেসিন আটক করে ।এই ঘটনার পর দিন অর্থাৎ শনিবার সকালে পুলিশ ব্লকের ভূমি দফতরের আধিকারিকদের বিষয়টি জানায়।ভূমি দফতরের আধিকারিকরা ওই খাদান সরোজমিনে খতিয়ে দেখে পুলিশ কে জানিয়ে দেন খাদানটি অবৈধ।এমনকি ভূমি দফতরের
আধিকারিকরা ওই অবৈধ খাদান নিয়ে থানায়
অভিযোগও দায়ের করেন।তার ভিত্তিতে পুলিশ অবৈধ খাদান চালু করে বালি লুঠ চালানো ও লুঠের বালি ডাম্পারে মজুত করা সংক্রান্ত একাধীক ধারায় মামলা রুজু করেছে ।বাজেয়াপ্ত করেছে ৯ বালি বোঝাই ডাম্পার ও জেসিবি মেশিন । বাজেয়াপ্ত হওয়া ওই ডাম্পার গুলির ও জেসিবির মালিক,চালক খালাসীর বিরুদ্ধেও পুলিশ মামলা রুজু করেছে ।অবৈধ খাদান চালানোর ঘটনায় জড়িত এক ’কুখ্যাত’ বালি মাফিয়া ও তাঁর সঙ্গীদেরও সন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ ।
সারাংপুরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন,বালি
মাফিয়ারা এখন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ,গ্রীন ট্রাইবুনালের রায় কোন কিছুই মানছে না । দামোদরের যেখানে সেখানে তারা অবৈধ খাদান খুলে বসে বালি লুঠ চালাচ্ছে। আবার যাঁরা বৈধ ভাবে বালি খাদানের লিজ পেয়েছেন তাঁরাও অনিয়ম করছেন । তাঁরা লিজের শর্ত না মেনে নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে গিয়ে অবৈজ্ঞানিক ভাবে জেসিবি মেসিন দিয়ে দামোদর থেকে বালি তুলে ট্রাক ,লরি ,ডাম্পার
ও ট্র্যাক্টরে লোড করছে । এমনকি বৈধ ও অবৈধ সব খাদানের মালিক ও তার লোকজন গ্রীঢ ট্রাইবুনালের রায়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নদীতে জেসিবি ও অন্য ভারী মেসিন নামিয়ে বালি তুলে চলেছে ।
সারাংপুরের চাষিদের অভিযোগ এখানেই শেষ নয় । তারা আরও জান,নদি বাঁধ রক্ষার স্বার্থে দামোদরের কিনারার ৫০ মিটার দূরত্ব থেকে বালি তোলার কথা আইনে বলা থাকলেও তা অনেক ক্ষেত্রেই মানছে না বালি কারবারীরা। সাংরাপুর বাঁশতলা এলাকার চাষিরা জানিয়েছেন ,“তাঁদের চাষ জমির কাছেই বালি মাফিয়ারা অবৈজ্ঞানিক ভাবে অবৈধ খাদান চালাচ্ছিল।তার কারণে দামোদরের গর্ভে চাষিদের জমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল । দেরিতে হলেও পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেওয়ায় জমি হারানোর আতঙ্ক থেকে সারাংপুরের চাষিরা মুক্তি পেল ।’
জামালপুরের বিজেপি নেতা জীতেন্দ্রনাথ ডকাল বলেন,’শুধু সারাংপুর নয়। জামালপুরের জোড়বাঁধ এলাকায় অবৈধভাবে বালি খাদান চালাচ্ছে শাসক দলের স্নেহধন্য এক বালি মাফিয়া । এছাড়াও কিছু বালি মাফিয়া বেরুগ্রাম অঞ্চলে ও জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চলে অবৈধ বালি খাদান খুলে বালি লুঠ করে চলেছে ।’জীতেন্দ্রনাথবাবু দাবী করেন,’পুলিশ এইসব এলাকার বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধেও একই রকম ভাবে কড়া ব্যবস্থা নিক । তবেই জামালপুরে নির্মূল হবে বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য ।’।