এইদিন ওয়েবডেস্ক,তামিলনাড়ু,২৩ নভেম্বর : ভারতের দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে ধর্মান্তরিত করার খেলা দীর্ঘদিন দিন ধরেই চলে আসছে । মূলত কেরালা ও তামিলনাড়ুতে হিন্দুদের বদ্ধভূমি বলে মনে করা হয় । কারন খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার খেলা এই দুই রাজ্যে তুলনামূলক ভাবে বেশি চলে । কিন্তু তামিলনাড়ুর মীনাক্ষিপুরমের (Meenakshipuram) বৈদেহী নামক নামে মাত্র ৮ বছরের এক হিন্দু দলিত মেয়ের সামনে স্থানীয় মোল্লাদের পর্যন্ত ঝুঁকতে হয়েছিল । আনুমানিক এক হাজার দলিতের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া এবং পরবর্তীকালে মীনাক্ষীপুরামের নাম পরিবর্তন করে ‘রহমতনগর’ করার ঘটনাটি একটি দুঃখজনক মোড় নেয়,যখন ৮ বছর বয়সী বৈদেহী, ইসলাম গ্রহণ করতে অটলভাবে অস্বীকার করে ।
ঘটনাটি ১৯৮১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারীর । ওই দিন মীনাক্ষিপুরমের ডঃ নাসরুদ্দিন কামাল তার সঙ্গীদের নিয়ে স্থানীয় দলিত পরিবারগুলিকে পনবন্দি করে রেখে একের পর এক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছিল । প্রায় এক হাজার দলিতকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেও ফেলে তারা । কিন্তু মাত্র ৮ বছরের হিন্দুশিশুকন্যা বৈদেহীকে তারা কিছুতেই ধর্মান্তরিত করতে পারেনি । এদিকে নাতনির প্রাণ শংশয় হতে পারে এই আশঙ্কায় বৌদেহীর দাদু তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে । গায়ত্রী মন্ত্রের প্রতি বৈদেহীর দৃঢ় সংকল্পকে তিনি কিছুতেই ভাঙতে পারেননি । বৈদেহী তার দাদুকে সাফ জানিয়ে দেয় যে সে কিছুতেই ইসলাম গ্রহণ করবে না, কারণ যারা তাকে এটি করতে বলছে (মৌলবীরা) তাদের হাতে তার সহপাঠীদের রক্তের দাগ লেগে আছে ।
পাশাপাশি ছোট্ট বৈদেহী তার দাদুকে গুরু গোবিন্দ সিং-এর দুই সন্তানের গল্পের কথা মনে করিয়ে । যারা প্রচুর চাপ এবং বর্বরতার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম গ্রহণ করেননি। শেষ পর্যন্ত তাদের জীবন্ত দেয়ালে ক্রুশবিদ্ধ করেছিল হানাদার মুঘলরা ।
এদিকে দাদু ব্যর্থ হওয়ার পর মাওলানা নুরুদ্দিন খান, ডক্টর নাসরুদ্দিন কামাল মিলে ছোট্ট বৈদেহীর উপর শুরু করে বর্বরোচিত অত্যাচার । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ছোট্ট মেয়েটির উপর ভয়ঙ্কর শারীরিক নির্যাতন করেছিল ওই দুই ইসলামি কট্টরপন্থী । শিশুটির ঘাড় ধরে ফুটন্ত জলে মুখ চেপে ধরেছিল তারা ।মেয়েটির মুখের চামড়া ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল । প্রচন্ড যন্ত্রাণায় কুকড়ে ওঠে বৈদেহী । তারই মাঝে তার মুখে ঘষে দেওয়া হয় লঙ্কার গুঁড়ো । এখানেই থেমে থাকেনি দুই ইসলামি নরপশু । জলন্ত চুলায় মেয়েটির মাথা চেপে ধরা হয় । চিৎকার করে সে ভগবানের কাছে সাহায্য যায় । তবুও মেয়েটি তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে । শেষে অবর্ণনীয় অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে মেয়েটি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
এদিকে এক হিন্দু শিশুকন্যার নিজ ধর্মের প্রতি অটল বিশ্বাস দেখে তাকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টাকারী ড: নাসরুদ্দিন কামালকে ভাবিয়ে তোলে । নাসরুদ্দিন এতটাই অনুপ্রাণিত হয় যে তার আকস্মিক হৃদয়ের পরিবর্তন ঘটে যায় । কামাল বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়নের সিদ্ধান্ত নেয় । দশ দিন ধরে সে বেদ পাঠ করার পর সে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । শেষে ১৯৮১ সালের ১১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে ইসলাম ত্যাগ করেন ডঃ নাসরুদ্দিন কামাল । নাম পরিবর্তন করে রাখেন আচার্য মিত্রজীবন । ওই অনুষ্ঠানেই ইসলাম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হন নাসরুদ্দিনের স্ত্রী ও তিন কন্যাও । স্ত্রীর নাম শ্রদ্ধাদেবী এবং তাদের কন্যাদের নাম আম্রপালি, অর্চনা এবং অপরাজিতা রাখা হয় ।
এখানেই শেষ নয়,ছোট্ট বৈদেহীর নির্মম পরিণতির জন্য তিনি অনুশোচনা প্রকাশ করেছিলেন। পাশাপাশি মুম্বাইয়ের সান্তা ক্রুজে আর্য সমাজের কাছে ১৯৮৫ সালের ১৫ নভেম্বর তার কন্যাদের দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন । ৮ বছরের হিন্দু শিশুকন্যা বৈদেহির উপর তিনি যে পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছিলেন তারই প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে তার মেয়েরা আর্য সমাজের হয়ে কাজ করবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন । তার কন্যাদের দত্তক নেওয়ার আবেদন অসহিষ্ণুতার পরিণতি এবং অন্ধকারতম সময়েও মুক্তির সম্ভাবনার একটি মর্মান্তিক অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে ।।
তথ্যসূত্র ও ছবি : সৌজন্যে অর্গানাইজ উইকলি ৷