এইদিন আন্তর্জাতিক ডেস্ক,১৮ আগস্ট : মুখের চামড়া বয়সের ভারে ঝুলে পড়েছে । কোঠরগত ঘোলাটে চোখ৷ মুখ ভর্তি সাদা দাড়ি দাড়ি-গোঁফ । মাথায় ইসলামিক টুপি । পরনে সাদা ফতুয়া ও লুঙ্গি । পাশে রাখা একটা ছাতা ৷ ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধ একটা বাড়ির সামনে ঠায় বসে আছেন । খাওয়াদাওয়াও করছেন না কিছু । কি ব্যাপার জানতে আশপাশের লোকজন তাকে জিজ্ঞেস করতেই বৃদ্ধের উত্তর শুনে তাদের চোখ কার্যত কপালে উঠে যায় । কারন বৃদ্ধ জানান যে ওই মহিলা তাকে বিয়ে না করা পর্যন্ত তিনি অনশন চালিয়ে যাবেন ৷ মহিলার বয়স ৩৫ বছর, একাধিক বিয়ে তার । বৃদ্ধও একাধিকবার বিবাহিত । ঘটনাটি বাংলাদেশের পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার । বৃদ্ধের নাম আবুল কাসেম মুন্সি(৭৫)৷
আবুল কাসেম মুন্সি উপজেলার বেতমোর রাজপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম মিঠাখালী গ্রামের বাসিন্দা । এর আগে অন্তত ৫-৭ টা বিয়ে করেছেন । একাধিক সন্তান সন্ততি রয়েছে তার । কিন্তু তার স্ত্রীরা হয় কেউ মারা গেছেন,নচেৎ পালিয়ে গেছেন । একাধিক ছেলেমেয়ে ও নাতিপুতি থাকলেও বৃদ্ধ এখন সম্পূর্ণ একা । তাই তার শেষ বয়সে একজন জীবনসঙ্গিনীর দরকার বলে জানান বৃদ্ধ কাসেম মুন্সি ।
এদিকে যে মহিলার বাড়ির সামনে আবুল কাসেম মুন্সি বিয়ের দাবিতে অনশনে বসেছেন তিনিও ইতিমধ্যে ৮-১০ বার স্বামী বদল করে ফেলেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর । এখন তিনি মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া ইউনিয়নের ঠুটাখালী গ্রামে বাপের বাড়িতেই রয়েছেন । এখন নিজের জীবন চালাতে বিয়েকে উপার্জনের মাধ্যম করেছেন ।
বৃদ্ধ আবুল কাসেম মুন্সির কথা অনুযায়ী, মাস দুয়েক আগে একদিন বাজারের ওষুধের দোকানে নিজের কিছু ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন তিনি । সেখানেই ওই মহিলাকে দেখে তার খুব ভালো লেগে যায় ৷ তার মুখের দিকে তাকাতেই মহিলা মুচসি হাসেন । তারপর দোকান থেকে বেরিয়ে পায়ে হেঁটে যেতে যেতে অনেক কথাবার্তা হয় তার । মহিলার কাছে নিজের নিঃসঙ্গতার কথা সব খুলে বলেন । মহিলাকে দেখে তার খুব সহানুভূতিশীল মনে হয়েছিল । সেই শুরু । তারপর তিনি একাধিকবার মহিলার টানে তার কাছে ছুটে গেছেন ।
জানা যায়,বছর খানেক আগে আবুল কাসেম মুন্সির স্ত্রী বার্ধক্যজনিত সমস্যায় মারা গেছেন । স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি পুনরায় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। একথা তিনি ঠুটাখালী গ্রামের ওই মহিলার কাছে খুলে বলেছিলেন । মহিলা বিয়ে করবে বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন বলে দাবি বৃদ্ধের । কিন্তু কয়েকদিন ধরে ওই মহিলা তাকে আর পাত্তা দিচ্ছিলেন না । শেষে তিনি শনিবার (১৬ আগস্ট) মহিলার বাড়ির সামনে বিয়ের দাবিতে অনশনে বসে পড়েন ।
বৃদ্ধ আবুল কাসেম মুন্সির দাবি, বিয়ের কথা বলে ওই নারী আমার কাছ থেকে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু কিছুদিন ধরে হঠাৎ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এমনকি আমাকে ভুল ঠিকানাও দেয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আজ সকালে তার আসল বাড়ি খুঁজে পেয়েছি। এখন হয় আমার টাকা ফেরত দেবে, নয়তো আমাকে বিয়ে করবে। এই দাবিতেই আমি অনশনে বসেছি।
এলাকাবাসী জানায়, ওই নারী আগেও একাধিক পুরুষকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি যেন আর কাউকে প্রতারিত করতে না পারেন সেজন্য তার শাস্তি হওয়া উচিত । এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে ওই নারী আত্মগোপনে চলে যান।
ঠুটাখালী গ্রামের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পলাশ ফকির বলেন, ‘তারা উভয়ই একাধিক বিয়ে করেছেন। ওই বৃদ্ধ এখন অনশনে নেই। তাদের বিষয়ে আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।’ মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল কাইয়ূম বলেন, ‘আমার কাছে এমন কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’।