প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০২ মে : এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ৬ জন পরীক্ষার্থী ।মেধা তালিকায় রাজ্যের চতুর্থ স্থানাধিকারীদের মধ্যে রয়েছে মহম্মদ সেলিম। জেলার কেতুগ্রামের নিরোল উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধারী ছাত্র মহম্মদ সেলিমের প্রাপ্ত নম্বর ৬৯২ (৯৮.৫৭ শতাংশ)। সেলিমের সাফল্যে খুশি তাঁর পরিবার পরিজন ও স্কুল শিক্ষকরা।
কেতুগ্রাম থানার নিরোল পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শিরুন্দি গ্রামে মহম্মদ সেলিমের মামার বাড়ি।ছোট বয়সে মা মারা যাবার পর থেকে সেলিম শিরুন্দি গ্রামে মামার বাড়ি থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে যায়। চতুর্থ স্থানাধিকারী মহম্মদ সেলিম জানিয়েছে, তাঁর সাফল্যের পিছনে সবথেকে বড় অবদান রয়েছে তাঁর মামা ফজলে করিমের । এছাড়াও স্কুল শিক্ষক ও প্রাইভেট শিক্ষকদেরও যথেষ্ট অবদান রয়েছে। সেলিম জানিয়েছে বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে সে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশুনা করবে। ইঞ্জিনিয়ার হওয়াই তাঁর বলে মহম্মদ সেলিম জানিয়েছে। নিরোল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু কুমার হাজরা জানিয়েছেন, ‘স্কুলের ছাত্র মোহাম্মদ সেলিম বরাবরই খুব মেধাবী। তাই আমরাও তাকে নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলাম। আমাদের স্কুলের ছাত্র মহম্মদ সেলিম এবছরের মাধ্যমিকে রাজ্যে চতুর্থ স্থান পাওয়ায় আমরা সত্যি গর্বিত।’
একই ভাবে মেধা তালিকায় রাজ্যে সপ্তম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে জেলার আউসগ্রামের অমরাগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সৌরিন রায় ।তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৯ (৯৮ .৪৩) শতাংশ)। আউশগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের অমরার গড় গ্রামের সৌরিন রায়ের সাফল্যে খুশির জোয়ার বইছে তাঁর পরিবার, স্কুল এবং গোটা গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল সৌরিনের । ভবিষ্যতে ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় বলে সৌরিন জানিয়েছে। ছেলের এই অভাবনীয় সাফল্যে আবেগপ্লুত সৌরিনের বাবা অভিজিৎ রায় বলেন, ‘আমরা ভীষণ আনন্দিত। সৌরিনের নিজের কনফিডেন্স ছিল অনেক। ওর একটা বিশাল প্রত্যাশা ছিল। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় থেকেই শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে গ্রামের মানুষজন বিশ্বাস করতেন, ও একদিন র্যাঙ্ক করবেই।’
মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় অষ্টম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে বর্ধমান বিদ্যার্থী ভবন বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী পাপড়ি মন্ডল।তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৮ (৯৮.২৯ শতাংশ )। পাপড়ির বাবা দেবাশীষ মন্ডলের টেলারিং এর ব্যবসা । মা পূর্ণিমা মন্ডল সাধারণ গৃহবধূ। পাপড়ি জানিয়েছে,তাঁর ছয় জন গৃহ শিক্ষক ছিল। ভাল রেজাল্ট করার জন্য মায়ের অবদান সব থেকে বেশি বলে পাপড়ি জানিয়েছে।ভবিষ্যতে এগ্রিকালচার নিয়ে পড়াশোনা করে ’ফরেষ্ট অফিসার হতে চায় পাপড়ি।গল্প বই পড়তে ভালো লাগার কথা শুনিয়েছে পাপড়ি । একই সঙ্গে সে জানিয়েছে, ’সময় মেপে নয় ,মন যখন চাইতো তখনই সে পড়তে বসতো। এইভাবে পড়াশুনা করেই সে সাফল্য পেয়েছে বলে জানিয়েছে।
সাফল্যে পিছিয়ে থাকেনি জেলার কালনা মহকুমা। এবছরের মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় নবম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে ময়ূখ বসু। কালনার কাঁকুরিয়া দেশবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় মেধাবী এই ছাত্রের প্রাপ্ত নাম্বার ৬৮৭ (৯৮.১৪ শতাংশ)।ময়ূখের বাড়ি কালনার মাতিশ্বরে ।ছেলের সাফল্যে খুশিতে ভাসছে ময়ূখের বাবা ও মা সহ পরিবার সদস্যরা । ময়ূখের বাবা সুদয় বসু প্রাক্তন বিএসএফ কনস্টেবল। মা মৌসুমী দত্ত বসু কাকুরিয়া দেশবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের পার্শ্বশিক্ষিকা।ময়ূখ জানিয়েছে,সে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ ঘন্টা পড়াশোনা করতো। পাশাপাশি নাচ-গানের জন্যেও তাঁকে সময় ম্যানেজ করতে হতো।
ময়ূখ আরো জানায়, ভাল ফল করার ব্যাপারে সে আশাবাদী ছিল । ভাল ফল করতে পারার জন্য স্কুল শিক্ষক এবং তাঁর বাবা ও মায়ের অবদান সবথেকে বেশী বলে ময়ূখ তবে ময়ূখ জানিয়েছে ,গতানুগতিক পড়াশোনার ইচ্ছা তাঁর নেই । সৃজনশীলতা এবং পড়াশোনার মিশ্রণে কিছু একটি করার ইচ্ছা তাঁর রয়েছে। আগামী দিনে সেভাবেই সে এগোতে চায় বলে জানিয়েছে। গান, কবিতা ,নাটক এমনকি কি প্যাড বাজাতেও দক্ষ ময়ূখ। তাঁর পছন্দের সাবজেক্ট অংক ও বায়োলজি । উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে নিয়ে পড়াশানা করবে বলে ময়ূখ বসু জানিয়েছে।
ময়ূখের মতই মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় নবম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে জেলার বর্ধমান মিউনিসিপাল বয়েজ স্কুলের ছাত্র। পরমব্রত মণ্ডল। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানি হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে বলে পরমব্রত জানিয়েছে।
মেধা তালিকায় দশন স্থানে জায়গা করে নিয়েছে
জেলার মঙ্গলকোটের কাশেমনগর বিএনটিপি গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী স্বাগতা সরকার।তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৬ (৯৮ শতাংশ)। বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা গৃহ শিক্ষক ও পরিবারের সকলের সহযোগিতায় এই সাফল্য এসেছে বলে স্বাগতা জানিয়েছে। ভবিষ্যৎতে ডাক্তার পড়তে চায় স্বাগতা।।