এইদিন ওয়েবডেস্ক,মুম্বাই,১০ ডিসেম্বর : মুম্বাইয়ের কুরলায় বাস দুর্ঘটনায় এযাবৎ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে । আহত হয়েছে অন্তত ৪৯ জন । নিহতদের মধ্যে আফরিন ও কানিজ ফাতেমা নামে দু’জন রয়েছে । ১৯ বছর বয়সী আফরিন তার জীবনের প্রথম চাকরিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে ৫৫ বছর বয়সী কানিজ হাসপাতালে কাজ করতেন এবং ডিউটিতে যাচ্ছিলেন । কুরলা এলাকায় ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বহু যানবাহন ও মানুষকে পিষে দেয় । বাসের চালককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো আফরিনের বয়স মাত্র ১৯ বছর। ৯ ডিসেম্বর, তিনি তার জীবনের প্রথম চাকরিতে যান। আজ তকের খবর অনুযায়ী, রাত ৯টার দিকে তিনি তার বাবা আব্দুল সেলিমকে ফোন করে জানান যে তিনি রিকশা পাচ্ছেন না। বাবা তাকে পায়ে হেঁটে কুর্লা স্টেশনে আসতে বলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর রাত ১০টার দিকে ভাবা হাসপাতাল থেকে সেলিমকে ফোন করে দ্রুত তাকে হাসপাতালে ডাকা হয়। পরিবারের লোকজন হাসপাতালে পৌঁছালে আফরিনের লাশ দেখতে পায়। দুর্ঘটনায় ৫৫ বছর বয়সী কানিজ ফাতিমাও মারা যান। তাঁর ছেলে আব্বাস জানিয়েছেন, তাঁর মা কুরলার একটি হাসপাতালে কাজ করতেন এবং সেই রাতে নাইট ডিউটিতে যাচ্ছিলেন। পথে বেস্টের বাসের ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়। সরকারের কাছে বিচার দাবি করেছেন আব্বাস।
দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহনকে ঘটনাস্থল থেকে সরানোর কাজও চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে বাসের চালক দাবি করেন, ব্রেক ফেল করায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। খবর অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত মৃতদের নাম কানিস ফাতিমা আনসারি, শিবম কাশ্যপ, আফরিন আবদুল সেলিম শাহ এবং আনাম শেখ। আজ মঙ্গলবার একটি ফরেনসিক দল দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এর আগে ডিসিপি গণেশ গাওড়ে ২৫ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন,প্রশাসন বাসটি সরিয়ে নিয়েছে এবং এটি আরটিও দ্বারা পরিদর্শন করা হবে। পুলিশ চালক সঞ্জয় মোরেকে আটক করেছে এবং তদন্ত চলছে। এদিকে শিবসেনা বিধায়ক দিলীপ লান্ডেও গভীর রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং বলেন,বাসের ব্রেক ফেইল করে এবং চালক বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। চালক ভয় পেয়ে ব্রেক চাপার পরিবর্তে এক্সিলারেটরে চাপ দিলে বাসের গতি বেড়ে যায়। পরে বাসটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
তবে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর অভিযোগ, বাস চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং ভারী যান নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামনে এসেছে, যাতে বাসটিকে পথচলতি মানুষদের পিষ্ট করতে দেখা যায়। নিয়ন্ত্রণহীন বাসকে রাস্তার বাম পাশে ঘুরতে দেখা যায়। কর্মকর্তাদের মতে, বেস্ট বাসের চালক ৩৩২ নম্বর রুটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এর পর বাসটি পথচারী, বেশ কয়েকটি যানবাহন ও একটি আবাসিক সোসাইটির গেটে ধাক্কা খেয়ে থেমে যায়।
তথ্য অনুযায়ী, ৯ ডিসেম্বর বাসটি মুম্বইয়ের কুরলা থেকে আন্ধেরির দিকে যাচ্ছিল। এরপর রাত ১০:৪৫ নাগাদ আম্বেদকর নগরের বুদ্ধ কলোনির কাছে চালক বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড ও অ্যাম্বুলেন্সকে খবর দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিধ্বস্ত বাসটি রাজ্যের বৃহত্তম সরকারি পরিবহণ সংস্থা ‘বৃহন্মুম্বাই ইলেকট্রিক সাপ্লাই অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট’ অর্থাৎ বেস্টের। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে বিপুল ভিড় জমে যায়। দুর্ঘটনার জেরে দীর্ঘক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকে। পুলিশ ছাড়াও রাজ্য কর্পোরেশনের নিরাপত্তা কর্মীরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।।

