আজ বাংলাদেশ পাকিস্তানপন্থী রাজাকারদের দখলে ৷ পাকিস্তানের বর্বর সেনার হাত থেকে দেশকে যিনি মুক্ত করেছিলেন সেই প্রথম রাষ্ট্রপতি ‘বঙ্গবন্ধু’ শেখ মুজিবুর রহমানের যাবতীয় চিহ্ন মিটিয়ে ফেলছে মহম্মদ ইউনূসের রাজাকার বাহিনী । শুধু তাইই নয়, তারা ভারতীয় সেনার অবদান পর্যন্ত মুছে ফেলছে একে একে । কিন্তু বাংলাদেশের রাজাকার বাহিনী ভারতের অবদান দেশবাসীকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় রত হলেও বিশ্বের ইতিহাসের পাতায় আজও জ্বলজ্বল করছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পিছনে ভারতের অবদানের কথা । এমনই একটি কাহিনী হল শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে পাকিস্তানের বর্বর সেনার হাত থেকে প্রাণ বাঁচানো । যার নেপথ্যে ছিলেন ভারতীয় সেনার একজন কর্নেল- অশোক তারা। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে আজকের দিনেই মাত্র তিন সৈন্য নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু’র পরিবারের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন তিনি । সেই রোমাঞ্চকর কাহিনী পড়ার পর প্রতিটি জাতীয়তাবাদী ভারতীয় গর্ব অনুভব করবেন ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতেই শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের একের পর এক ২০ জনকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানপন্থী রাজাকাররা ।এই হত্যাকাণ্ডের আগে, ১৯৭১ সালে, ধানমন্ডির এই বাড়িটি পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা বেষ্টিত ছিল মুজিবুর রহমানের পরিবার। পরিবারটিকে প্রায় নয় মাস ধরে বাড়িতে পনবন্দি করে রাখা হয়েছিল। যে কোনও সময়, সেই পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে হত্যা করার জন্য প্রস্তুত ছিল পাকিস্তান সেনা। কিন্তু একজন ভারতীয় কর্নেল তার তিন সৈন্য সহ সেই পরিবারটিকে নিরাপদে বের করে এনেছিলেন। আর যে ভারতীয় কর্নেল বঙ্গবন্ধুকে তার পরিবার সহ রক্ষা করেছিলেন তিনি ছিলেন অশোক তারা।
কিন্তু, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু বিদ্রোহী রাজাকার অফিসার বঙ্গবন্ধু এবং তার পুরো পরিবারকে হত্যা করে। কেবল তার দুই কন্যা, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা বেঁচে যান কারণ তারা দুজনেই তখন জার্মানিতে ছিলেন। বলা হয়ে থাকে যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW আগে থেকেই এই বিষয়ে অবগত ছিল। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে, হত্যার সাত মাস আগে, RAW-এর প্রতিষ্ঠাতা আরএন কাও শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করে তাকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর উত্তর ছিল,”এরা আমার সন্তান, তারা আমার কোনও ক্ষতি করবে না।”
অশোক রায়নার ‘ইনসাইড RAW’ বই অনুসারে, আরএন কাও সেই সময় শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন যে তার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে এবং তিনি তাকে এই সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পাঠাবেন। ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে, একজন শীর্ষ RAW কর্মকর্তা ঢাকায় পৌঁছে শেখ মুজিবুর রহমানকে এই ষড়যন্ত্রে জড়িত অফিসারদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। কিন্তু, তিনি তখনও বিশ্বাস করেননি । বরঞ্চ নিজের জাতভাইদের প্রতি তিনি অগাধ আস্হা প্রকাশ করেন।
সলিল ত্রিপাঠী তার ‘দ্য কর্নেল হু উইড নট রিপেন্ট’ বইয়ে বলেছেন যে বিদ্রোহী অফিসাররা তাদের মিশনে চলে যাওয়া সত্ত্বেও, শেখ মুজিবুর রহমানের কোনও ধারণা ছিল না যে তাকে হত্যার মিশন শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহ তথ্য পেয়েছিলেন যে দুটি সেনা ব্যাটালিয়ন কোনও আদেশ ছাড়াই শেখ মুজিবুরের বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি শেখ মুজিবুরকে ফোন করলেন, কিন্তু লাইন ব্যস্ত ছিল। অনেক চেষ্টার পর তিনি শেখ মুজিবুরের সাথে যোগাযোগ করলেন। শেখ মুজিবুর রেগে বললেন, “শফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাদি আক্রমণ করোছে । তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও ।” ইতিমধ্যে, পিছন থেকে গুলির শব্দ শোনা গেল এবং মুজিবুর রহমানের পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল ।

অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তার ‘বাংলাদেশ আ লিগেসি অফ ব্লাড’ বইয়ে এই ঘটনাটি উল্লেখ করে লিখেছেন, “শেখ মুজিবুরকে দেখে মহিউদ্দিন ঘাবড়ে যান। তিনি কেবল বলতে পারেন, স্যার আপনি আশুন। মুজিবুর চিৎকার করে বলেন- আপনি কী চান? আপনি কি আমাকে হত্যা করতে এসেছেন? ভুলে যান। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এটা করতে পারে না। আপনি কে?” ঠিক তখনই মেজর নূর একটি স্টেনগান নিয়ে প্রবেশ করেন এবং মহিউদ্দিনকে ধাক্কা দিয়ে পুরো স্টেনগানটি খালি করে দেন। মুজিবুর মুখ থুবড়ে পড়ে যান। তখন তার প্রিয় পাইপটি তার হাতে ছিল। ‘দ্য কর্নেল হু উইড নট রিপেন্ট’ অনুসারে, একজন চাকর দৌড়ে তার স্ত্রীকে শেখ মুজিবুরকে গুলি করার খবর দেন । সৈন্যরাও পিছন থেকে সেখানে এসে গুলি চালাতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সকল লোক নিহত হয়। তারপর শেখ মুজিবুরের বাড়ির সামনে একটি জিপ থামে এবং মেজর ফারুক রহমান সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। মেজর হুদা তার কানে ফিসফিসিয়ে বলেন, ‘সবাই শেষ।’
২০১০ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্নেল ফারুক রহমান এবং মেজর হুদা সহ পাঁচজন খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সাতজন খুনি এখনও পলাতক। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম বিচার। দীর্ঘদিন ধরে এই খুনিদের বিরুদ্ধে কোনও বিচার পরিচালিত হয়নি। ১৯৯৬ সালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।।