এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাবুল,৩০ জুন : গত মাসে আফগানিস্থানের নিমরোজ প্রদেশের জারঞ্জ শহর, নিমরোজ কেন্দ্র এবং এই প্রদেশের জেলাগুলিতে কমপক্ষে ৫০ জন মাদকাসক্তের লাশ সংগ্রহ করা হয়েছে । বেশিরভাগ মানুষ গরম আবহাওয়া, ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কারণে মারা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ,রোগীদের জীবন বাঁচানোর জন্য তালিবানদের কোনো পরিকল্পনা নেই এবং তাদের একমাত্র কাজ মৃতদেহ সংগ্রহ করা এবং কবরস্থ করা।নিমরোজের বাসিন্দারা এই প্রদেশে মাদকাসক্তদের থাকার জন্য উপযুক্ত জায়গা এবং সহায়তা কর্মসূচির অভাব নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে । তারা জোর দিয়ে বলেন, মাদকাসক্তদের মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় মানুষের উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে এবং এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ।
নিমরোজে তালিবান পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্রও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে যে এই প্রদেশে মাদকাসক্তদের মৃত্যুর হার বেড়েছে। সূত্রমতে, মাদকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃতদেহ শহর থেকে সংগ্রহ করে প্রদেশের হাসপাতালের মর্গে স্থানান্তর করা হয়েছে । গত মাসে এই প্রদেশে কমপক্ষে ৫০ টি মৃতদেহ সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি । অন্যদিকে, নিমরোজের তালিবান পৌরসভার সূত্র বলছে, মাদকাসক্তদের মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় তাদের পরিবার পরিজনদের দ্রুত খুঁজে বের করতে গিয়ে লাশ পচে যাওয়ার আশঙ্কার কারনে মর্গ থেকে নিয়ে গিয়ে কবরস্থ করে দেওয়া হবে।
সামাজিক কর্মী মোহাম্মদ ইউসুফ (ছদ্মনাম) বলেছেন,’নিমরোজ একটি সীমান্ত প্রদেশ, প্রতিদিন যখন আফগান অভিবাসীদের ইরান থেকে বিতাড়িত করা হয়, তাদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মাদকাসক্ত থাকে যারা অর্থের অভাবে আসক্তরা তাদের বাড়িতে ফিরতে পারেনি এবং নিমরুজে অবস্থান করে,যা উদ্বেগজনক । তালিবানদের মাদকাসক্তদের পূনর্বাসনের করার পরিকল্পনা থাকা উচিত। নিমরোজে তাদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে ভালো, অন্যথায় প্রতিটি মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে তার প্রদেশে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে এই প্রদেশটি মাদকাসক্তদের এপিসেন্টারে পরিণত না হয়।’
এর আগে, ইরান থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত বেশ কয়েকজন প্রাক্তন নিরাপত্তা বাহিনীকে এই প্রদেশে তালিবানরা গ্রেপ্তার করে ।বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে ইরান থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তালিবানদের হাতে অনেক প্রাক্তন সৈন্য নিহত হয়েছে এবং এখন মাদকে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যু বৃদ্ধির সাথে সাথে তালেবানরা প্রাক্তন সেনাদের এবং তাদের বিরোধীদের নামে হত্যা করছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে । বহু মানুষ ক্ষুধা ও তৃষ্ণার ফলে মারা যাচ্ছে । যদিও তালিবান মাদকের দায় এড়িয়ে গেছে । স্থানীয় বাসিন্দারা মাদকাসক্তদের চিকিৎসা, খাদ্য ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করার জন্য দাবি করেছে ।
জারঞ্জ শহরের বাসিন্দা আব্দুল আহাদ বলেন যে তিনি মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ করেছেন এবং সম্প্রতি তাদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আবাসিক এলাকা ও রাস্তাঘাটে মাদকাসক্তদের মৃত্যু মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে।
জারঞ্জ শহরের এই বাসিন্দা বলেছেন,’আজকাল অনেক নেশাগ্রস্ত ইরান থেকে বিতাড়িত হয়ে নিমরোজে এসেছে। একদিকে মাদকাসক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি অন্যদিকে তাদের মৃত্যু বৃদ্ধি উদ্বেগজনক। যখন আমরা বাড়ির কাছে মাদকাসক্তের মৃতদেহ দেখি, তখন এটি আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক।’
আব্দুল আহাদ আরও বলেন, গত সপ্তাহে আমাদের বাড়ির পাশে দুই মাদকসেবী মারা গেছে। তৃষ্ণা বা ক্ষুধার জ্বালায় মারা যাওয়া ২৫ বা ২৮ বছর বয়সী যুবকের লাশ দেখলে একদিকে আমরা চিন্তিত হই, অন্যদিকে স্থানীয় শিশুরা আতঙ্কিত হয়৷ কারন মৃতদেহ সেখানেই পচে গিয়ে দুষণ ছড়াবে । তাই মৃতদেহ স্থানান্তর না হওয়া পর্যন্ত সকলেই চিন্তায় থাকে ।।