এইদিন ওয়েবডেস্ক,কোপেনহেগেন,২৬ জুলাই : ফের কোরান পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে ডেনমার্কে । মঙ্গলবার “ড্যানিশ প্যাট্রিয়টস” নামে একটি গ্রুপের পাঁচ সদস্য কোপেনহেগেনে মিশরীয় দূতাবাসের সামনে কোরানের একটি অনুলিপিতে আগুন ধরিয়ে দেয় । পার্শ্ববর্তী সুইডেনের এক রাজনৈতিক দলের নেতা রাসমুস পালুদানের কোরান পোড়ানোর পরে ডেনমার্কে এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এনিয়ে এটি তৃতীয় ঘটনা । এদিকে লাগাতার একই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকায় মুসলিম রাষ্ট্রগুলি চরম ক্ষুব্ধ । তারা দুই দেশের কাছে কোরান পোড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে । তবে ডেনমার্ক এবং সুইডেন বলেছে যে তারা কোরান পোড়ানোর নিন্দা জানাচ্ছে কিন্তু বাকস্বাধীনতা রক্ষার নিয়মের অধীনে তা প্রতিরোধ করতে পারবে না ।
প্রসঙ্গত, সুইডেনে তুর্কি দূতাবাসের সামনে কোরান পোড়ান রাসমুস পালুদান । তার জের মিটতে না মিটতেই সুইডেনের ইরাকি বংশভূত সুইডিশ নাগরিক সালওয়ান মোমিকা নামে এক যুবক স্থানীয় একটি মসজিদের সামনে কোরানের অনুলিপি নিয়ে ফুটবল খেলেন,বইটির পাতা ছিঁড়ে জুতো মোছেন,পরিশেষে তিনি বইটিতে আগুন ধরিয়ে দেন । সেই ঘটনার প্রতিবাদে গত সপ্তাহে ইরাকের বিক্ষোভকারীরা বাগদাদে সুইডিশ দূতাবাসে আগুন ধরিয়ে দেয় । ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু আয়াতুল্লাহ খামেনি সালওয়ান মোমিকাকে কোনো মুসলিম রাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান । যদিও সেই আহ্বানে কোনো সাড়া দেয়নি সুইডেন । সুইডিশ কর্তৃপক্ষ সালওয়ান মোমিকার শাস্তির জন্য মুসলিম আহ্বানের উত্তর দিতে অস্বীকার করেছে এবং আয়াতুল্লাহ খামেনির দাবির উত্তর দেওয়ার জন্য তারা মাথা ঘামায়নি । এখন ডেনমার্কও কোরান পোড়ানোর প্রতিবাদ আন্দোলনের অংশ হয়ে গেছে ।
এদিকে দুই ইউরোপীয় দেশে লাগাতার কোরানের অবমাননায় মুসলিম রাষ্ট্রগুলি প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে । ইরানের বিদেশ মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার তেহরানে সুইডেনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কোরান অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানায় । পাশাপাশি আগামী জুমার নামাজের পর সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করেছে ইরান । ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান এই ঘটনায় জাতিসংঘের মহাসচিবকে একটি চিঠি লিখেছেন । ইরাকের বিদেশ মন্ত্রণালয় সুইডিশ দূতাবাসে হামলার নিন্দা করেছে এবং বলেছে যে ফের এমন ঘটনা ঘটলে তারা সুইডেনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে । জর্ডান কিংডম স্টকহোমে কোরান অবমাননাকে ‘একটি বেপরোয়া কাজ হিসাবে’ অবিহিত করে ঘটনার নিন্দা করেছে । কাতারের বিদেশ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে যে সুইডিশ কর্তৃপক্ষের উচিত ‘এসব লজ্জাজনক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া’ । সৌদি আরব রিয়াধে সুইডিশ চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে ডেকে তাদের কাছে প্রতিবাদপত্র দিয়েছে । তুরস্ক এটিকে “ঘৃণ্য হামলা” বলে নিন্দা করেছে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে “এই ঘৃণামূলক অপরাধ প্রতিরোধে সিদ্ধান্তমূলক ব্যবস্থা” নেওয়ার জন্য সুইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ।সংযুক্ত আরব আমিরাত সুইডিশ চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্সকে তলব করেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ আন্দোলনের নেতা হাসান নাসরাল্লাহ আরব ও মুসলিম দেশগুলোকে ইরাকের পদক্ষেপ অনুসরণ করার এবং তাদের দেশ থেকে সুইডিশ রাষ্ট্রদূতদের বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছেন । তিনি জুমার নামাজের পরে বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়ে বলেন যে “পুরো বিশ্বকে দেখতে হবে যে আমরা কীভাবে আমাদের কোরানকে আলিঙ্গন করি এবং পুরো বিশ্বকে দেখতে হবে যে আমরা কীভাবে আমাদের রক্ত দিয়ে আমাদের কোরানকে রক্ষা করি ।’।