প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১০ নভেম্বর : বহু চেষ্টা চালিয়েও মৃতদেহ পাচার কাণ্ডের মূল চক্রীকে পুলিশ এখনও জালে পুরতে পারেনি। তবে পাচারের উদ্দেশ্যে বর্ধমান মেডিকেল কলেজের ’এনাটমি’ বিভাগ থেকে মৃতদেহ চুরির সময় হাতেনাতে ধরা পড়া ৫ জনকেই পুলিশ গ্রেফতার করছে। হন্যে হয়ে পুলিশ খোঁজ চালাচ্ছে ঘটনার মূল চক্রী আরামবাগ মেডিকেল কলেজের কর্মী প্রদীপ মল্লিকের । তাকে জালে পোরা গেলেই মৃতদেহ পাচার কাণ্ডের নেপথ্যে থাকা সব রহস্যের কিনারা করা সম্ভব হবে বলে পুলিশ মনে করছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,ধৃতদের মধ্যে অভিনাশ মল্লিকের বাড়ি দার্জিলিং জেলার মাটিগড়া থানার কালামজোটে।অভিনাশ এবং অপর ধৃত বর্ধমানের সাধনপুর নিবাসী নন্দলাল ডোম হলেন এনাটমি বিভাগেরই কর্মী।এছাড়াও গ্রেফতার হয়েছে বর্ধমানের ষাড়খানা গলি নিবাসী ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবোটোরী (এফএসএল) বিভাগের কর্মী গৌতম ডোম।বাকি দুই ধৃত শম্ভু মিত্র ও সুমন মিত্র সম্পর্কে বাবা ও ছেলে।তাঁরা বর্ধমান শহরের বাবুরবাগ এলাকার বাসিন্দা। শম্ভু বর্ধমান হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক এবং সুমন শববাহী গাড়ির চালক।পুলিশের দাবি ধৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে মৃতদেহ পাচার কাণ্ডে জড়িত থাকার কথা কবুল করেছে।সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে বর্ধমান থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার পাঁচ ধৃতকেই বর্ধমান আদালতে পেশ করে । বিচারক অভিনাশ মল্লিক, গৌতম ডোম এবং নন্দলাল ডোম কে ৮ দিন পুলিশ হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।বাকি দু’জনকে ৮ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ।
জেলা পুলিশ সুপার আমন দীপ জানিয়েছেন,
‘ঘটনার মূল চক্রী পলাতক । তাকে ধরতে পারা গেলে মৃতদেহ পাচারের নেপথ্যে থাকা গোটা বিষয়টি পরিস্কার হয়ে হবে। ওই পলাতক ব্যক্তি একসময়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজের কর্মী ছিলেন ।’ পুলিশ সুপার তাঁর প্রতিক্রিয়ায় এইসব কথা জানালেও বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্ব প্রাপ্ত কোন আধিকারিক এদিন কোন প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি ।
উল্লেখ্য, বুধবার সকালে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ থেকে মৃতদেহ পাচার করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরে পড়ে শবদেহ বহনকারী গাড়ির চালক সহ বেশ কয়েকজন । তারা শবদেহ বাহী গাড়িতে করে তিনটি মৃতদেহ পাচারের আগেই তাদের কীর্তি হাসপাতালের ধিরাপত্তা কর্মীদের নজরে চলে আসে।তারাই তিনটি মৃতদেহ সহ শবদেহ বাহী গাড়িটিকে আটক করে।সেই খবর পেয়ে বর্ধমান থানার মেডিকেল কলেজে গিয়ে তিনটি মৃতদেহ এবং শবদেহ বাহী গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে ৭ জনকে আটক করে । জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে । এই পাঁচ জনকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়েই পুলিশ জানতে পারে গোটা ঘটনার মূল চক্রীর নাম ও পরিচয় ।
আরও জানতে পারে ওই মূল চক্রী তিনটি মৃতদেহ ছাড়াও ভিসেরা, পাকস্থলী এবং অগ্নাশয় জাতীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বরাত তাদের দিয়েছিল। ধৃতরা আন্তঃরাজ্য মৃতদেহ পাচারকারীদের সঙ্গে যুক্ত আছে কি না সেই বিষয়টিও পুলিশ তদন্ত করে দেখছে । কারণ দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জেনেছে,মৃত দেহগুলি ভিন রাজ্য উত্তরাখণ্ডে পাচারের পরিকল্পনা ছিল ধৃতদের ।
এদিকে মৃতদেহ পাচারে ঘটনা সামনে আসার পর
বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নড়ে চড়ে বসেছে । এনাটমি’ বিভাগ ও তার আশপাশ এলাকা সিসি ক্যামেরায় মুডিয়ে ফেলা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানকে নিরাপত্তার ব্যাপারটি নিয়ে আরো কঠোর হওয়ার কথা বলা হয়েছে।এছাড়াও কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের সব বিভাগের উপর নজরদারি আরো বাড়ানোর ব্যাপারেও তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে।।