এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১৯ জুলাই : বাংলাদেশে সংরক্ষণ বিরোধী হিংসাত্মক আন্দোলনে এযাবৎ ৪১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে । বৃহস্পতিবার ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ ও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। নিহত সাংবাদিকের নাম মেহেদী হাসান। তিনি ঢাকা টাইমসের একজন প্রতিবেদক ছিলেন। এদিক্স সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান আন্দোলনকারীরা প্রত্যাখ্যান করার পর দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে । শেখ হাসিনা সরকার বিক্ষোভ শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে ঢাকাসহ অন্যান্য শহরের রাজপথে নামিয়ে দিয়েছেন। দেশে দাঙ্গা ঠেকাতে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবাও নিষিদ্ধ করেছে শেখ হাসিনা সরকার। সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও হোস্টেল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরতে বলেছে শেখ হাসিনা সরকার। সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গেও আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । এদিকে বাংলাদেশের বিক্ষোভগুলি সহিংস রূপ নেওয়ার পর ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় একটি পরামর্শ জারি করেছে।ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক বিক্ষোভের সময় ভারতীয়দের বাড়ির ভিতরে থাকতে এবং যে কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে তাদের দূতাবাসের নম্বরও প্রকাশ করেছে। এদিকে, অনেক ভারতীয় দেশে ফিরতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে ।
বাংলাদেশে আন্দোলনকারীদের অধিকাংশই ছাত্র। তাদের প্রতিবাদের পেছনের কারণ হল সংরক্ষণ সংক্রান্ত বাংলাদেশের হাইকোর্টের দেওয়া সাম্প্রতিক রায় । বাংলাদেশের হাইকোর্ট, পয়লা জুলাই, দেওয়া ওই রায়ে দেশে ৫৬ শতাংশ সংরক্ষণ পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের বংশধরদের জন্য ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়। এই ৫৬ শতাংশ সংরক্ষণ ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার সরকার বিলুপ্ত করেছিল। কিন্তু এখন আবার তা বাস্তবায়নের পক্ষে হাইকোর্ট। যদিও হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেও শান্ত হচ্ছে না আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি, সরকারকে অবিলম্বে সংরক্ষণের ওপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে । তবে হাসিনার সরকার বলছে তারা সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবে।
সংরক্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন যে বাংলাদেশে এমনিতেই কম সরকারি চাকরি রয়েছে, তার উপরে, মেধাবী প্রার্থীদের বাদ দিয়ে তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই ইস্যুতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে রেখেছে। ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চলছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র মোর্চার সঙ্গেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধছে । বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি সরকারি ভবনে হামলা ও ভাংচুর করে। তারা বাংলাদেশের সরকারি চ্যানেল বিটিভির প্রধান কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় । বিক্ষোভকারীরা সহিংস হয়ে উঠলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এর জেরে একের পর এক আন্দোলনকারীর মৃত্যু হচ্ছে । এছাড়াও বিপুল সংখ্যক আহত হয়েছেন। এর পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ।।