এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),১১ জুলাই : ফেসবুকে পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এক কলেজ ছাত্রীর ৷ অবশেষে তিনি প্রেমিককে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন । কিন্তু বিয়ের চারমাসের মাথায় শ্বশুরবাড়িতে অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হল বছর ২০-এর ওই বধূর ৷ বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার পাঁচুন্দি গ্রামের ঘটনা । বুধবার রাতে ঋত্বিকা চট্টোপাধ্যায় (ঘোষ) নামে ওই বধূর মৃতদেহটি তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেতুগ্রাম হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ । পরে খবর পেয়ে পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে পাঠায় । ময়নাতদন্তের জন্য বধূর দেহটি শুক্রবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে । এদিকে মৃতার বাপের বাড়ির অভিযোগ যে অতিরিক্ত পনবাবদ ৫ লক্ষ টাকা দিতে না পারায় মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেছে । পুলিশ জানিয়েছে,ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারন জানা যাবে।
জানা গেছে,কাটোয়া শহরের স্টেডিয়াম পাড়ায় বাপেরবাড়ি মৃতা ঋত্বিকা চট্টোপাধ্যায় (ঘোষ)-এর । তার এক যমজ বোন রয়েছেন । ঋত্বিকা কাটোয়া কলেজে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে প্রথমবর্ষের ছাত্রী ছিলেন । তাদের বাবা দেবেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় সেনাবিভাগে কাজ করেন । মা অদিতি চট্টোপাধ্যায় গৃহবধূ । ঋত্বিকার শ্বশুরবাড়ি কেতুগ্রাম থানার পাঁচুন্দি গ্রামের কালীতলাপাড়ায় । তার স্বামী অরুনকুমার ঘোষের ছেলে অসীম । অসীম মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং সৌদি আরবে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন । ফেসবুকে দু’জনের পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । মাস চারেক আগে তারা উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করেন । বিয়ের পর মাসদুয়েক ছুটি কাটিয়েগত ১৮ মার্চ সৌদি আরবে কর্মস্থলে ফিরে যান অসীম । তখন থেকে শ্বশুরবাড়িতেই ছিলেন ঋত্বিকা ।
মৃতার মা অদিতি চট্টোপাধ্যায় বলেন,’বুধবার রাতে মেয়ের শাশুড়ি ফোন করে জানান ঋত্বিকা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে এবং কেতুগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৷ তড়িঘড়ি আমরা কেতুগ্রাম হাসপাতালে ছুটে যাই । কিন্তু গিয়ে দেখি হাসপাতালে মেয়ের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে । কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন নেই ৷’ তার অভিযোগ,মেয়ের বিয়েতে নগদ ৫ লক্ষ টাকা এবং ২০ ভরি সোনার গহনা সহ আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র যৌতুক হিসাবে দেওয়া হয়েছিল । সম্প্রতি মেয়ের শুশুরবাড়ি থেকে কাটোয়ায় একটা নতুন বাড়ি নির্মানের কাজ শুরু করা হয়েছে । আর ওই বাড়ি নির্মানের জন্য মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়ি ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দিচ্ছিল । টাকা দিতে না পারায় শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়ের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছিল। তিনি বলেন,’আমাদের সন্দেহ যে টাকা দিতে না পারার কারণেই আমার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে ওরা মেরে ফেলেছে ।’
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুন বোন ও বাপেরবাড়ির আরও কয়েকজন মিলে সুন্দরবন বেড়াতে গিয়েছিলেন ঋত্বিকা । ২৮ জুন ফেরার পর বাপের বাড়িতেই ছিলেন তিনি । গত মঙ্গলবার শ্বশুরবাড়িতে যান। এরপর বুধবার রাতে শ্বশুরবাড়িতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় ওই বধুর । জামাই অসীমের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন,মৃতার মা অদিতিদেবী । তিনি বলেন,’আমার মেয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিল । কিন্তু জামাই পড়াশোনার কোনো খরচই দিত না, আমাদের দিতে হতো । উল্টে শ্বশুরবাড়ির লোকজন হুমকি দিত যে হুমকি দিত পড়াশোনা ছাড়িয়ে দেবে। এ নিয়ে আমাদের মেয়ে হচ্ছে মানসিক চাপের মধ্যে ছিল ।’ এদিকে বধূর মৃত্যুর পর থেকে উধাও হয়ে গেছে মৃতার শ্বশুর ও শাশুড়ি । পুলিশ তাদের সন্ধান চালাচ্ছে।।