এইদিন ওয়েবডেস্ক,দুর্গাপুর(পশ্চিম বর্ধমান),১২ অক্টোবর : পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এমবিবিএস ছাত্রীকে গনধর্ষণের ঘটনার প্রায় ৩৬ ঘন্টা কেটে গেলেও এখনো কোনো সে অর্থে সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ । বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর ৩ জনকে দুর্গাপুর নিউটাউন থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে । যদিও নির্যাতিতার মায়ের দাবি যে ৫ জন মিলে তার মেয়েকে গনধর্ষণ করেছিল । এদিকে উড়িষ্যার বাসিন্দা নির্যাতিতা ছাত্রীটি যে কলেজে পড়াশোনা করত, সেই দুর্গাপুরের আইকিউ সিটি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়িয়ে গেছে । একটি ভিডিও বার্তায় কর্তৃপক্ষ কলেজের নিরাপত্তার ত্রুটির কথা অস্বীকার করেছে । শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা ডাঃ অর্চনা মজুমদার নির্যাতিতার খবর নিতে এবং ওই কলেজ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন । সেখানে তিনি কলেজের নিরাপত্তার পাশাপাশি নারী নির্যাতনের মামলায় রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন । পাশাপাশি তিনি একটি চাঞ্চল্যকর পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান যে এরাজ্যে নারী নির্যাতনের ৪ লক্ষ মামলা অমীমাংসিত, ভারতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে । এই সমস্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করে নির্যাতিতাদের ন্যায় বিচার দেওয়ার দাবি জানান তিনি ৷
ডাঃ অর্চনা মজুমদার বলেন,’পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে যে ঘুন ধরেছে, সে মামলা আনসলভড, এনসিআরবি বলছে যে আমাদের মেয়েদের উপর ক্রাইমের ৪ লক্ষের বেশি মামলার কোনো সুরাহাই হয়নি । এখনো অব্দি বিচার হয়নি । সারা ভারতবর্ষের মধ্যে এক নম্বরে পশ্চিমবঙ্গ । এগুলোকে দ্রুত ফাস্ট ট্রাক কোর্টে বিচার করে মেয়েদেরকে তো ন্যায়বিচার দিতে হবে । শুধু তাই নয়, এই যে ক্রাইমগুলো হচ্ছে হচ্ছে, আমরা এখন দৌড়াদৌড়ি করলাম, সাত দিন পর ধামাচাপা পড়ে গেল । তারপর আর আলোই দেখল না । এই জায়গা গুলো থেকে কমিশনের তুলে আনা কাজ।’
এদিকে দুর্গাপুরের আইকিউ সিটি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে একটি ভিডিও বার্তায় বলা হয়েছে, কলেজের নিরাপত্তা দায়িত্ব শুধু গেট পর্যন্ত । ছাত্রীটি সহ যে দুই দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া সেদিন বাইরে গিয়েছিল তারা রাত্রি ৭:৫০ নাগাদ গেটে স্বাক্ষর করে ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়েছিল । তারপরে বাইরে কি হয়েছিল সেটা তাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয় । তবে অর্চনা মজুমদার প্রশ্ন তুলেছেন,’কলেজে সিসিটিভি নেই কেন ? মেয়েটিকে খেতে কেন বাইরে যেতে হয়েছিল ? কলেজের কাছাকাছি কেন খাবার ভালো জায়গা করা হয় ? এগুলো কর্তৃপক্ষকেও দৃষ্টি দিতে হবে । এগুলো হলো সচেতনতা৷ যদি এক হাজারটা মেয়ে থাকে তবে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা তো করতে হবে । জঙ্গলের ভিতর দিয়ে খাবার কিনতে যাবে, আর কলেজ উদাসীন, তাহলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকবে৷ এটা মানুষের মানবিকতা কোয়ালিটির কম্প্রোমাইজ৷’ তিনি নারী নির্যাতন রুখতে প্রত্যেককেই যৌথভাবে কিছু না কিছু সমাধান সূত্র খুঁজে বের করার আহ্বান জানান ।
প্রসঙ্গত,গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এক সহপাঠী ছাত্রের প্রস্তাবে রাতের খাবার খেতে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়েছিল উড়িষ্যার জলেশ্বরের ওই ছাত্রী । নির্যাতিতার মায়ের কথায়,খাওয়া দাওয়ার পর মেয়ের সহপাঠী আশপাশে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় । প্রথমে মেয়ে রাজি হয়নি । কিন্তু তার চাপাচাপিতে মেয়ে ঘুরতে যায়। কিছুটা দূরে গেলে ৩ জন তাদের পথ আটকায় । মেয়ের সহপাঠী তখন ছুটে পালায় । এরপর ওই তিনজন মিলে মেয়েকে একটা ঝোপের কাছে টেনে নিয়ে যায়। সেখানে পাঁচজন মিলে মেয়ের সম্ভ্রম লুন্ঠন করে ।’ তিনি আরও জানান,একজন তার মেয়ের স্মার্টফোন ছিনিয়ে নেয় এবং পরের দিন ৩০০০ টাকা দিলে ফোন ফেরত দেওয়ার শর্ত দেয় । পাশাপাশি চিৎকার করলে মেয়েকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তার ।
এদিকে এই ঘটনার ৩৬ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ । আজ রবিবার সকালে ঘটনাস্থলের ড্রোন উড়িয়ে তদন্ত চালায় নিউটাউন থানার পুলিশ । উদ্দেশ্য গণধর্ষণকাণ্ডে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করা । পুলিশ সূত্রে খবর, পুলিশ একাধিক তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে। এবং সেই তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই কয়েকজনকে আটক করা হয়।এবং যাদেরকে আটক করা হয়েছে, তাঁদের এই ঘটনা সরাসরি যুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গোটা ঘটনায় তিনজনের উপস্থিতি একেবারে স্পষ্ট বলেই দাবি করা হয়েছে। আটকের পর তাঁদের পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল।এবং শেষ অবধি পাওয়া খবর, এবার মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে তাঁদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।।

