প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১২ জুলাই : ওষুধপত্রের পাশাপাশি মাদক তৈরিতেও লাগে সরীসৃপ প্রজাতির পতঙ্গভুক নিশাচর প্রাণী তক্ষকের দেহাংশ । সেই কারণে অতি সক্রিয় তক্ষকের চোরাচালান চক্র।সোমবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের কালনা থানার পুলিশ ও বন দফতরের আধিকারিকরা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে এমনই এক চক্রের চার সদস্যকে পাকড়াও করে বিরল প্রজাতির একটি তক্ষক উদ্ধার করলো । বন দফতরের তরফে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের ধারায় মামলা রুজু করা হলে পুলিশ ওই চার ব্যক্তিকেই গ্রেফতার করে ।
কালনা ও কাটোয়া মহুকুমা বন আধিকারিক শিবপ্রসাদ সিনহা জানিয়েছেন, ধৃতদের নাম ঝুলন ঘোষ,অজিত বিশ্বাস ,গোকুল গায়েন ও চন্দন দাস।তাঁরা মূলত হুগলি ও কালনার বাসিন্দা ।তক্ষকটি নিয়ে তাঁরা নদিয়ার দিক থেকে কালনায় এসেছিল। বন্য প্রাণ সংরক্ষণ আইনের ধারায় ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে মঙ্গলবার কালনা মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়।বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন জেল হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। শিবপ্রসাদ সিনহা এও জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া তক্ষকটির চিকিৎসা করে অভয়ারণ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে ।
কালনা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য জানিয়েছেন,কিছু লোক অবৈধভাবে একটি তক্ষক হাত বদল করতে পারে, এমন খবর সোমবার বিশেষ সূত্র মাধ্যমে কালনা থানার পুলিশ জানতে পারে ।এই খবর পেয়েই পুলিশ বিষয়টি বনদফতর কে জানায় । এর পর পুলিশ ও বন দফতরের আধিকারিকরা যৌথ ভাবে অভিযানে নামে । কালনা থানার সাহাপুর কালীতলার কাছে চারজন ব্যক্তিকে ধরা হলে তাদের কাছ থেকে একটি তক্ষক উদ্ধার হয়।ওই ব্যক্তিরা তক্ষকটির বিষয়ে বৈধ কোন নথিপত্র দেখাতে পারেন না।তাই বন দফতর তক্ষকটিকে নিজেদের হেপাজতে নিয়ে ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে ।
বন দফতর সূত্রে জানাগিয়েছে ,তক্ষকের পোশাকি নাম ’টোকে গেকো’। “২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি তক্ষক বন্য প্রাণ সংরক্ষণ আইনের আওতায় এসেছে।সংরক্ষণ তালিকার চতুর্থ শ্রেণীতে রয়েছে তক্ষক“।প্রাণীবিদ্যা গবেষকদের (সরীসৃপ) দাবী ,“এইচআইভি প্রতিষেধক তৈরির গবেষনায় তক্ষকের দেহাংশ ব্যবহার হয়।চিন ও তিব্বতে আবার তক্ষকের দেহাংশ দিয়ে যৌন ক্ষমতা বর্ধক হিসাবে ব্যবহৃত তেল তৈরি হয়। এ ছাড়াও অসাধু ব্যক্তিরা তক্ষকের দেহাংশ দিয়ে মাদকও তৈরি করছে।প্রাণীটির চামড়া দিয়ে বিভিন্ন বিলাসসামগ্রীও তৈরি করা হয় ।
বন দফতরের আধিকারিকরা মনে করছেন,এই সবের জন্যে বিদেশের পাশাপাশি ভারতেও সক্রিয় হয়েছে তক্ষকের চোরা চালান চক্র।পাচারকারীদের দৌরাত্বে তক্ষকের সংখ্যা কমছে।তাই প্রাণিটিকে সংরক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। এদিন যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তারা ঠিক কি উদ্দেশ্যে তক্ষকটি হাতবদল করতে চেয়েছিল,তা খতিয়ে দেখছেন বন দফতরের আধিকারিকরা ।
ছবি উদ্ধার হওয়া তক্ষক ও ধৃতরা ।।