প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫ এপ্রিল : এযেন অনেকটা বগটুই কাণ্ডেরই পুণরাবৃত্তি । খুনের বাদলা নিতে পুলিশের সামনেই খুনি ও তাঁর পরিজনদের বাড়িতে ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন।বগটুই কাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতে ফের সোমবার পূর্ব বর্ধমানের গলসির রামগোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সন্তোষপুর গ্রামে ঘটে গিয়েছে এমন ঘটনা।আর তা নিয়ে পুলিশের দিকে আগুল উঠতেই শুরু হয় ধরপকড়। রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ সন্তোষপুর গ্রাম থেকে ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করার পর এখন কার্যত পুরুষ শূণ্য সন্তোষপুর গ্রাম । গ্রাম জুড়ে শুধুই বিরাজ করছে পুলিশি ধরপাকড়ের আতঙ্ক।তারই মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্তে মঙ্গলবার বেলায় সিআইডির ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞ টিম কলকাতা থেকে সন্তোষপুর গ্রামে পৌছায় । ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞ শৈবাল বাগচির নেতৃত্বে থাকা টিমের সদস্যরা গ্রামে অগ্নিকাণ্ডের তদন্তের সারেন। জানা গিয়েছে সিআইডি উৎপল ঘোষকে খুনের ঘটনার তদন্তও করবে।
অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে এলো কলকাতা সিআইডির ফিঙ্গার প্রিন্ট টিমের বিশেষ দল। এই দলে রয়েছেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ শৈবাল বাগচি সহ চার জন। এদের মধ্যে একজন ফোটগ্রাফার ও দু’জন ফিঙ্গারপিন্ট এক্সপাট রয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে এই টিম গলসি থানায় আসেন। তারপর থানার একজন অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে তারা সন্তোষপুরে গ্রামে যান। পাশাপাশি তাঁরা খুনের তদন্তও করবেন ।
কৃষি প্রধান গলসির সন্তোষপুর গ্রাম হঠাৎ করে এই ভাবে খবরের শিরণা জায়গা করে নেওয়ার নেপথ্য কারণটাও যথেষ্ট শিহরণ জাগানো। স্ত্রীকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করেছিলেন এই গ্রামেরই বাসিন্দা উৎপল ঘোষ (৩৩)। শুধু প্রতিবাদ করাই নয় , স্ত্রীকে উত্যক্ত করার ঘটনায় জড়িত প্রতিবেশী মনোজ ঘোষের বিরুদ্ধে তিনি গলসি থানায় অভিযোগও জানিয়ে ছিলেন ।তারই বদলা নিতে রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুড়ুর দিয়ে কুপিয়ে উৎপল ঘোষকে নৃশংস ভাবে খুন করে মনোজ ঘোষ । রাতে মাথায় কুড়ুল গেঁথে থাকা অবস্থায় এলাকার একটি
পুকুর পাড় থেকে উদ্ধার হয় উৎপলের মৃতদেহ । মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনার তদন্তে নেমে গলসি থানার পুলিশ ওই রাতেই মনোজকে আটক করে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে ।উৎপলকে নৃশংস ভাবে খুন করার কথা জেরায় মনোজ পুলিশের কাছে স্বীকার করে নেয় ।এর পরেই পুলিশ খুনের ধারায় মামলা রুজু করে অভিযুক্ত মনোজ ঘোষকে গ্রেপ্তার করে সেমবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে । আরও তদন্তের প্রয়োজনে তদন্তকারী অফিসার ধৃত মনোজকে ৪ দিনের পুলিশি হেপাজতে নিয়েছে ।
এই পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও মনোজের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ে ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকালে উৎপলের মৃতদেহ বাড়িতে ফেরার পর। তা আঁচ করে গ্রামে পুলিশও চলে যায় । তারই মধ্যে গ্রামের উত্তেজিত মানুষজন মনোজ ও তাঁর জ্যাঠা এবং কাকার বাড়িতে চড়াও হয়ে আগুন ধরিয়ে । আগুনে পোড়ে মনোজ ও তাঁর জ্যাঠা ও কাকার বাড়িতে থাকা একাধিক গাড়ি ও খড়ের পালুই । আগুন নেভানোর জন্য খবর দেওয়া হয় দমকলেব। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌছে বেশকিছু সময়ের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে । যদিও খুনের ঘটনার বদলা নিতে বাগটুইয়ের কায়দায় খুনি ও তার পরিজনদের বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা পুলিশ কোন ভাবেই মেনে নিতে পারে না। তাই পুলিশ আগুন লাগানোর ঘটনায় জড়িতদের ধরতে রাতভর অভিযান চালিয়ে ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে । ফের গ্রামে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য এদিনও এলাকায় পুলিশ মোতায়েন থাকে ।।