এইদিন ওয়েবডেস্ক,হাওড়া,১৬ মার্চ : হাওড়া রেলস্টেশন থেকে চুরি করা শিশুকে রাজস্থানের সওয়াই মাধোপুর জেলার আদালওয়াড়া থেকে বৃহস্পতিবার উদ্ধার করেছে রেল পুলিশ । এই ঘটনায় আগেই সাহানারা বেগম এবং মাফুজা বিবি নামে দুই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বর্তমানে তারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে৷ এবারে গ্রেপ্তার করা হল মানব পাচারকারী দলের আরও এক পান্ডা সোরাজ কানরাজকে । ধৃতদের দাবি, তারা শিশুটিকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিল ।
রাজ্য পুলিশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজে বলা হয়েছে,হুগলির ধনেখালির বাসিন্দা এক মহিলা বাড়ি ফেরার জন্য নিজের ৩ বছরের কন্যাসন্তানকে কোলে নিয়ে হাওড়া রেলস্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষা করছিলেন । সেই সময় মায়ের সঙ্গে গল্প জুড়ে দেয় অপরিচিত মাঝবয়সী এক মহিলা(সাহানারা বেগম) । শিশুটিকে কিছু খাইয়ে আনার অছিলায় সে কাছে পিঠের দোকানে নিয়ে যাবে বলে উধাও হয়ে যায় । কিন্তু দীর্ঘক্ষণ মহিলা ফিরে না আসায় হাওড়া জিআরপির কাছে উদভ্রান্ত অবস্থায় হাজির হন শিশুর মা । হাওড়া জিআরপি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি গঙ্গার পূর্বপাড়ে কলকাতা থেকে শুরু করে পশ্চিমপাড়ে প্রায় অর্ধেক হাওড়া জেলা চষে ফেলে । কিন্তু শিশুটির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি ।
শেষ পর্যন্ত সিসিটিভিতে সাহানারা হদিশ পায় । সে রেলস্টেশন থেকে বাচ্চাটিকে চুরি করে বার বার যানবাহন পাল্টে ঘুরপথে হাওড়ার বীরশিবপুরে নিয়ে যায় শিশুটিকে । বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে পুলিশ দেখতে পায় হাওড়া-মেটিয়াব্রুজ রুটের মিনিবাস ধরছে ওই মহিলা, সঙ্গে রয়েছে বাচ্চাটি। পরবর্তী পর্যায়ের ‘ট্র্যাকিং’-এ দেখা গেল, কলকাতা পুলিশের এলাকায় বিচালিঘাট থেকে লঞ্চ ধরে হাওড়া পুলিশের সাঁকরাইল থানা এলাকায় নাজিরগঞ্জ ঘাটে পৌঁছলেন মহিলা। সেখান থেকে অটো ধরে চাঁপাতলা, সেখান থেকে ফের অটো ধরে সাঁকরাইল স্টেশন। সেখান থেকে বেলা এগারোটা নাগাদ হাওড়া-পাঁশকুড়া লোকাল ধরে ফুলেশ্বর, সেখানে স্টেশনে নেমে টোটো ধরে উলুবেড়িয়া হয়ে বীরশিবপুর যায় ওই মহিলা ।
পুলিশ এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে,এবার চলল মহিলাকে নিরন্তর খোঁজার পালা। যা শেষ হলো ১১ মার্চ, উলুবেড়িয়া থানা এলাকায়। গ্রেফতার হল সাহানারা বেগম। তার বয়ানের ভিত্তিতে ১২ মার্চ বাউড়িয়া থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার হলো আর এক পাচারকারী মাফুজা বিবি। কিন্তু শিশুটি কোথায়? মাফুজা জানায়, তাকে রাজস্থানের জয়পুর স্টেশনে চালান করে দেওয়া হয়েছে সোরাজ কানজার নামে এক ব্যক্তির কাছে, যেখান থেকে সম্ভবত তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সওয়াই মাধোপুর জেলার আদালওয়াড়ায় ।
রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে,ততদিনে পেরিয়ে গিয়েছে এক সপ্তাহ , এবং দুই মহিলার কল ডিটেল রেকর্ড থেকে যা জানা গেল, তাতে ৯ বা ১০ মার্চ শিশুটিকে পাচার করা হয়েছে। যা করণীয়, তা তৎক্ষণাৎ না করলে আর করে লাভ নেই। সুতরাং প্রথম গ্রেফতারির পরেই, ১১ মার্চ সন্ধ্যায়, ফ্লাইট ধরে জয়পুর রওনা হয়ে যান সাত- সদস্যের একটি টিম, সঙ্গে মেয়েটির মা। লক্ষ্য, শিশুটির উদ্ধার। আনন্দের কথা, লক্ষ্যপূরণ হয়েছে, রাজস্থান পুলিশের সহায়তায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে তাকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে আমাদের জিআরপি। গ্রেফতার হয়েছে সোরাজ , এখন পুলিশি হেফাজতে। ট্রানজিট রিমান্ডে আনা হবে এ রাজ্যে। শিশুটি উদ্ধার-অপারেশনে বিভিন্ন সময়ে আরপিএফ হাওড়া, আরপিএফ খড়্গপুর, হাওড়া পুলিশ (গ্রামীণ), হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট, কলকাতা পুলিশ, এবং সওয়াই মাধোপুরের পুলিশ সুপারের তরফে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে ।।