দিব্যেন্দু রায়,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),৩০ সেপ্টেম্বর : সকালে নদীর চড়ে গরু চড়াতে গিয়েছিলেন ৩ জন গ্রামবাসী । তখন নদীতে তেমন জল ছিল না । তাঁদের মোট ১১ টি গরু তখন চড়ে গজিয়ে ওঠা আগাছা খেতে ব্যাস্ত । এদিকে দুপুর নাগাদ তিন গ্রামবাসী মিলে চড়ে বসে খাবার খাচ্ছিলেন । সেই সময় আচমকা নদীর জল বাড়তে থাকে । এত দ্রুত হারে জল বাড়তে থাকে যে গরুসহ তিন গ্রামবাসী চড়ের ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে আটকে পড়েন । বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের কল্যানপুর এলাকায় অজয় নদে । খবর চাওড় হতেই নদীর পাড়ে ভিড় করেন আটকে পড়া গ্রামবাসীর উদ্বিগ্ন পরিবার পরিজন । সেই সঙ্গে ভিড় জমান শতাধিক গ্রামবাসী । এদিকে খবর পেতেই ঘটনাস্থলে চলে আসেন আউশগ্রাম ও মঙ্গলকোট থানার পুলিশ আধিকারিকরা । আসে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর লোকজন । তারপর সন্ধ্যা নাগাদ নদীতে স্পীডবোট নামিয়ে রাইফেল মণ্ডল,সাজাহান খান ও সামসুল খান নামে তিন গ্রামবাসীকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয় । তবে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে । এদিকে ওই ৩ গ্রামবাসীকে উদ্ধার করতে গিয়ে জলের তোড়ে ভেসে চলে যায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একটি স্পীডবোট । শেষে ঘটনাস্থল থেকে ৭ কিমি দুরে ওই স্পীডবোটকে উদ্ধার করা হয় । রাত পর্যন্ত উদ্ধার না হওয়ায় নদীর চড়ে আটকে পড়া ৩ গ্রামবাসীর পরিবারের লোকজন চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন । প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে রাতেও উদ্ধার কাজ চালানো হবে ।
জানা গেছে,আউশগ্রামের সুন্দলপুর গ্রামে বাড়ি ওই ৩ ব্যক্তির । তাঁরা চাষবাসের পাশাপাশি গবাদি পশু প্রতিপালনও করেন । প্রতিদিনের মত এদিন সকালেও তাঁরা গ্রামের পাশে অজয় নদের চরে গরু চড়াতে গিয়েছিলেন । বেলা ১২ টা নাগাদ তাঁরা যখন চড়ে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন সেই সময় নদীর জল আচমকা বেড়ে যায় । তাঁরা আর পাড়ে উঠতে পারেননি । গরু নিয়ে চড়ের ঝোপজঙ্গলের মধ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন ।
জানা গেছে,ওই ৩ জনের মধ্যে একজনের কাছে মোবাইল ফোন ছিল । তিনি বাড়িতে ফোন করে ঘটনার কথা বলেন। তারপর চড়ে আটকে পড়া ৩ গ্রামবাসীর পরিবার পরিজনসহ শতাধিক লোকজন নদীর পাড়ে ভিড় জমান । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন প্রশাসনিক প্রতিনিধিরা । কাটোয়া ও বর্ধমান থেকে আসে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের বাহিনী । নদীতে স্পীডবোট নিয়ে বাহিনীর সদস্যরা চড়ে আটকে পড়া লোকেদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায় । কিন্তু জলের এতটাই স্রোত যে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরেও ওই ৩ জনকে এদিন রাত্রি সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে ।
জানা গেছে,লাগাতার বর্ষণের জেরে ব্যারেজগুলির জলস্তর অনেক বেড়ে গেছে । ফলে ব্যারেজগুলি থেকে জল ছাড়া হচ্ছে । তার জেরেই এদিনের এই বিপত্তি । তবে শুধু ওই তিন গ্রামবাসী ও তাঁদের গরুগুলোই আটকে পড়েনি । পাশাপাশি অজয়ের বালি ঘাট থেকে বালি আনতে যাওয়া অনেক ট্রাক্ট্রর ও নৌকা জলের তোড়ে ভেসে গেছে বলে জানা গেছে । আচমকা অজয় নদের জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম,মঙ্গলকোট,কেতুগ্রাম ব্লকের অন্তর্গত অজয় নদ সংলগ্ন গ্রামগুলিতে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে ।।