এইদিন ওয়েবডেস্ক,লালমনিরহাট,২৭ মার্চ : চতুর্থ শ্রেণী থেকে পড়াশোনার খরচ চালানোয় কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ৬৬ বছরের বৃদ্ধ শরিফুল ইসলাম প্রধানকে বিয়ে করলেন বাংলাদেশের লালমনিরহাটের ২২ বছরের তরুনী আইরিন আক্তার । শরিফুল ইসলাম প্রধানের বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌরসভার দক্ষিণ কোর্টতলি রসুলগঞ্জ এলাকায়। আইরিন আক্তার একই উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের নজরুল ইসলামের মেয়ে। গত ২২ মার্চ তাদের নিকাহ হয়। মোহরানা করা হয় ১০ লাখ টাকা। তাদের একটা ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । ছবিতে স্ত্রী আইরিন আক্তারকে মিষ্টি খাওয়াতে দেখা গেছে শরিফুল ইসলামকে ।
বাংলাদেশের রংপুরের একটি নার্সিং কলেজের ছাত্রী আইরিনের বয়স এখন ২২ বছর। স্কুলে থাকাকালীন তার সঙ্গে শরিফুলের পরিচয় হয়। শরিফুলের বয়স এখন ৬৬ বছর। আইরিন বলেন, ‘আমার পরিবারের অবস্থা ভালো ছিল না। চতুর্থ শ্রেণী থেকে উনিই (শরিফুল) আমাকে সহায়তা করে আসছেন। পড়াশোনার খরচ, বই, এমনকি কলেজে ভর্তি সবই উনি সামলেছেন। শরিফুল এতটাই দায়িত্ব নিয়ে পাশে ছিলেন যে, আমার পড়াশোনা যাতে থেমে না যায় সেজন্য তিনি ব্যাংকে ছয় লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। ওই টাকা দিয়েই চলছিল আমার পড়াশোনা।’ তরুণী বলেন,’একটা সময় পরিবার আমার বিয়ের চিন্তা শুরু করে। আমার মনে ভয় ছিল, বিয়ের পর হয়তো পড়াশোনা থেমে যাবে। হয়তো কেউই আমারে এমনভাবে বুঝবে না, পাশে থাকবে না যেভাবে শরিফুল থেকেছেন। তখনই মনে হলো, যার সঙ্গে আমি সব সময় নির্ভার থাকতে পেরেছি তিনি-ই যদি আমার জীবনসঙ্গী হন, তাহলে আমার স্বপ্নগুলো বেঁচে থাকবে।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে শরিফুল রাজি ছিলেন না। আইরিনের প্রস্তাবে অবাক হয়েছিলেন, ছিলেন দ্বিধায়। কিন্তু আইরিনের দৃঢ়তা আর আন্তরিকতা তাকে টেনে আনে বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত পারিবারিক সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু আইরিন আর শরিফুলের বিয়ের ছবি, ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা।
পাটগ্রাম শহরের বাসিন্দা ইমদাদুল হক বলেন, ‘এটা প্রেম না। এটা আবেগ। ঘটনাটি মেনে নেওয়া আমাদের জন্য কষ্টকর।’ এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শরিফুল বলেন,’আইরিন আমাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চেয়েছে, আমি শুধু তাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। অন্য কেউ বুঝুক না বুঝুক, আমরা জানি আমরা কাকে বেছে নিয়েছি।’ বয়সে ৪৪ বছরের বড় একজনের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন কী-না প্রশ্নে আইরিনের পিসি সাফিউল ইসলাম বলেন,’আমাদের মেয়ে বড় হয়েছে। মেয়ের মতামতের ওপর প্রাধান্য দিয়ে তার বিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেয়ের সুখটাই তো আমাদের সবার সুখ।’ পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মামুন হোসেন সরকার বলেন,’বিয়ে-শাদির জন্য বয়স কোনো ব্যাপার না। মনটাই বড় কথা। এখানে তাদের বিয়ে নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বললেও আমি মনে করি শরিফুলের প্রতি আইরিনের শ্রদ্ধা সব সমালোচনাকে হার মানিয়েছে।’।