এইদিন ওয়েবডেস্ক,সম্বল(উত্তরপ্রদেশ),১৮ ডিসেম্বর : সোমবার(১৬ ডিসেম্বর) উত্তর প্রদেশ বিধানসভায়, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, সম্বলের দাঙ্গার ইতিহাস বর্ণনা করার সময় বলেছিলেন যে সব মিলে ২০৯ জন হিন্দু নিহত হয়েছিল ওই সমস্ত দাঙ্গায় । দাঙ্গায় হিন্দুদের মৃত্যুর এই পরিসংখ্যান সম্বল জেলা প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
১৯৭৮ সালের দাঙ্গায় নিহত হিন্দু পরিবারের একজন সদস্য ইংরাজি নিউজ পোর্টাল অর্গানাইজ উইকলিকে বলেছেন যে মুসলিমদের ভয়ে মানুষ এখনও সম্বলে যেতে পারে না। আমার বয়স ৮ বছর যখন মুসলমানরা আমার বাবাকে হত্যা করেছিল, এবং আমার এক বোন মারা গিয়েছিল। আমি একজন শ্রমিক হিসাবে কাজ করে পরিবার চালাচ্ছি ।’ মূলত কংগ্রেসের শাসনকালে উত্তরপ্রদেশের সম্বলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলি হয়েছিল । কিন্তু কংগ্রেসের তোষামোদি নীতির কারনে মুসলিমদের দ্বারা হিন্দুদের একচেটিয়া নিপিড়নের শিকার হতে হয় বলে অনেকে অভিযোগ তুলছেন৷ তারা এও দাবি করেছেন তৎকালীন ইউপি পুলিশ মুসলিমদের অভিযোগ নিলেও হিন্দুদের কোনো অভিযোগই নিত না৷ যেকারণে হিন্দুদের একতরফা মার খেতে হত । সেই সময়কালে কংগ্রেসের নারায়ণ দত্ত তিওয়ারি,রাম নরেশ যাদবরা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ।
সংবাদমাধ্যম ওপি ইন্ডিয়া জানিয়েছে যে সম্বল জেলা প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে দেখা যায় যে ১৯৭৬ সালের দাঙ্গায় ৫ হিন্দু নিহত হয়েছিল। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৭ দিনের জন্য কারফিউ জারি করতে হয়। এক হিন্দু ব্যক্তি কর্তৃক মৌলবীকে হত্যার গুজব ছড়িয়ে দাঙ্গার উসকানি দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি মুসলমানরা গুজব ছড়ায় যে পেটিয়া গ্রামের অর্ধ-পাগলা রাজকুমার সাইনি আমাদের মৌলবীকে হত্যা করেছে, অথচ মসজিদ কমিটির লড়াইয়ের জেরে ওই মৌলবীকে হত্যা করে এক মুসলমান । এরপর মানজার শফি ও আতাউল্লাহ তাতারীর নেতৃত্বে একদল মুসলিম দাঙ্গাবাজ সুরজকুন্ড ও মানস মন্দির ভেঙ্গে দেয়। এরপর সারথাল পোস্টে কিষাণলালের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে মুসলিম দাঙ্গাবাজরা। হিন্দুদের প্রতিরোধের পর তারা পাথর নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। এদিকে খুন হয়েছেন সোতিপুরার হরি সিং ও কোটিপুরভি এলাকার রাকেশ বৈশ্য।
এরপর ১৯৭৬ সালের ২৪ এপ্রিল কোটপুরভি এলাকায় কাল্লুর বাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ছেলে সালামের মৃত্যু হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় সারায়ত্রিনের মহল্লা লাল মসজিদের কাছে বৃদ্ধ কামতা প্রসাদকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া জয়চাঁদ রাস্তোগিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া আরও একজন হিন্দুকে খুন করা হয়েছে, যার নাম এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই মামলায় যখন ২০-২২ জন মুসলমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন ভারসাম্য তৈরি করতে প্রশাসন একই সংখ্যক ‘নিরীহ’ হিন্দুকেও গ্রেপ্তার করেছিল।
যখন এই দাঙ্গা হয়েছিল, ঠিক সেই সময়ে শফিকুর রহমান বার্কেরও আবির্ভাব হচ্ছিল। ১৯৭৮ সালে সম্বলে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ দাঙ্গায় বার্ক প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল । মানজার শফি,যে ১৯৭৬ সালের দাঙ্গার সময় মুসলিম দাঙ্গাকারীদের নেতৃত্ব দিয়েছিল, ১৯৭৮ সালের দাঙ্গার সময়ও সক্রিয় ছিল । সে সময় হিন্দু শিক্ষকের মেয়ে ও স্ত্রীকে অপহরণ করেছিল। শিক্ষকের মেয়েকে ধর্ষণের পর ছেড়ে দেওয়া হয়, আর তার স্ত্রীকে রক্ষা করে হিন্দুরা। ১৯৭৮ সালের দাঙ্গার পর শফিকুর রহমান বার্ক হরিহর মন্দিরে হিন্দুদের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিল ।
উল্লেখ্য, সম্বলের দাঙ্গা নিয়ে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে প্রশাসন। এতে দেখা যায় দাঙ্গার কারণে সম্বলে হিন্দুদের জনসংখ্যা ক্রমশ কমছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় সম্বল পৌর এলাকায় হিন্দুদের জনসংখ্যা ছিল ৪৫ শতাংশ, যা আজ ১৫-২০ শতাংশে নেমে এসেছে। তখন মুসলমান ছিল ৫৫%। আজ বেড়ে ৮০-৮৫ শতাংশ হয়েছে।।