এইদিন ওয়েবডেস্ক,মহারাষ্ট্র,২৯ জুলাই : মহারাষ্ট্রের নাভি মুম্বাইয়ে যশশ্রী শিন্ডে (Yashashri Shinde) নামে ২০ বছরের এক তরুণীকে ছুরি দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। মেয়েটির বিভীষিকাময় দেহ পাওয়া গেছে উরণ রেলওয়ে স্টেশনের কাছে ঝোপের মধ্যে । তথ্য অনুযায়ী, যশশ্রীর গোপনাঙ্গে ধারাল অস্ত্র দিয়ে একাধিক বার আক্রমণ হয়েছে। তার হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তার পিঠে ও পেটে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত করা হয়। তার বুকেও অনেক দাগ রয়েছে। পরিচয় এড়াতে তার মুখ বিকৃত করা হয়েছে। যশশ্রীর মৃতদেহের চুলও কেটে ফেলা হয়েছে। লাশের কাপড়ও ছেড়া পাওয়া গেছে। হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে স্পষ্ট হবে । তরুনীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পেশায় অটোচালক মহম্মদ দাউদ শেখের (Md Dawood Shaikh)বিরুদ্ধে বর্তমানে সে পলাতক । নাভি মুম্বইয়ের ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ বিবেক পানসারে বলেছেন,২৭ শে জুলাই ভোর ২ টার দিকে পুলিশ একটি ফোন পেয়েছিল যে উরান রেলস্টেশনের কাছে ঝোপের মধ্যে একটি মেয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন ও ধারাল অস্ত্রের ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। এতে বোঝা যায় তাকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে । অন্যদিকে, যশশ্রীর নিখোঁজ রিপোর্ট নথিভুক্ত করা হয়েছে। পরে পরিবারের সদস্যরা যশশ্রীকে তার পোশাক দেখে শনাক্ত করেন বলে তিনি জানিয়েছেন ।
জানা গেছে,মৃত যশশ্রী উরানের বাসিন্দা এবং বেলাপুরের একটি কল সেন্টারে কাজ করতেন। তিনি গত ২৫ শে জুলাই সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন, কিন্তু বাড়ি ফেরেননি। সব জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর পরিবারের সদস্যরা ক্লান্ত হয়ে থানায় নিখোঁজ রিপোর্ট দায়ের করেন । নিহতের বাবা সুরেশ শিন্ডে পুলিশের কাছে তার বিবৃতিতে বলেছেন যে তার স্ত্রী ২৫ জুলাই নভি মুম্বাইয়ের উরান থানায় তাদের মেয়ে যশস্বী শিন্ডের নিখোঁজ অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
এরপর পুলিশ তদন্ত শুরু করলে দুপুর দেড়টার দিকে উরণ মার্কেট এলাকায় তাকে শেষ দেখা যায়। পুলিশ যখন তার কল রেকর্ড অনুসন্ধান করে, তখন তার সিডিআর থেকে পাওয়া যায় যে তিনি এক ব্যক্তির একটি নম্বরে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতেন। এই নম্বরটি মহম্মদ দাউদ শেখ নামে এক যুবকের । দাউদ শেখও উরানের বাসিন্দা । তল্লাশি চলাকালীন পুলিশের সন্দেহ, দাউদ শেখের সঙ্গে যশশ্রী কোথাও পালিয়ে গেছে। তবে পুলিশ জানতে পেরেছে যে মেয়েটি নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে তার ফোনটিও বন্ধ ছিল।
পুলিশ যখন দাউদ শেখের বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে দেখে যে যশশ্রী এবং তার পরিবার তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে পকসো মামলায় এফআইআর দায়ের করেছিল। মেয়েটির পরিবার দাউদ শেখকে যশশ্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে দেখেছিল। যশশ্রী তখন নাবালিকা। এর পরে, পুলিশ পকসো-এর অধীনে মামলা নথিভুক্ত করার সময় দাউদ শেখকে গ্রেপ্তার করে।
দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর দাউদ শেখ বেরিয়ে এসে কর্ণাটকে চলে যায় । জেল থেকে বেরিয়ে যশশ্রীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন বলেও সন্দেহ পুলিশের। এ জন্য দাউদ আবারও যশশ্রীকে তার খপ্পরে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দাউদ বারবার যশশ্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছে এবং আবার বন্ধুত্বের জন্য অনুরোধ করেছে ।
তার কথায় বিশ্বাস করে যশশ্রী তার জীবনের মারাত্মক ভুল করে বসে । তারা দু’জনে আবার কথা বলতে শুরু করে। দাউদ ও যশশ্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করত। দাউদ আসলে কি পুরনো মামলার প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল নাকি যশশ্রীকে হত্যার পিছনে অন্য কারন আছে তাকে গ্রেফতারের জেরাতেই স্পষ্ট হবে ।
পুলিশ তদন্তে আরও জানতে পেরেছে যে ঘটনার দিন দাউদের অবস্থান ছিল উরানে। তাই সন্দেহ করা হচ্ছে কর্ণাটক থেকে উরানে আসার পর যশশ্রীকে ডেকে নৃশংসভাবে খুন করে পালিয়ে গেছে সে । পুলিশ এখন তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে ৷।