প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০১ মার্চ : টাকা থাকতেও খরচে ব্যর্থ।গ্রামীণ এলাকায় উন্নয়ন কাজের জন্য কেন্দ্রের পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকে দেওয়া অর্থের এক চতুর্থাংশ খরচে ব্যর্থ পূর্ব বর্ধমান জেলার ২০ টি গ্রাম পঞ্চায়েত।তাদের টাকা পড়ে থাকায় জেলার বাকি পঞ্চায়েত গুলি চলতি আর্থিক বছরের জন্যে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেতে অসুবিধায় পড়ছে । টাকা খরচে ব্যর্থতার জন্য জেলা প্রশাসন ওই ২০ টি পঞ্চায়েতকে ’দুর্বল’ বলে ঘোষণা করলো। ’দুর্বল’ গ্রাম পঞ্চায়েত গুলিকে নিয়ে শুক্রবার বৈঠক করেন জেলাশাসক আয়েষা বাণী এ। সেই বৈঠকেই সামনে আসে জেলায় ২১৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের খাতায় কেন্দ্রের পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ৩০ কোটি টাকার মতো এখনও পড়ে রয়েছে। দ্রুত পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচ করার কথা জেলাশাসক ওই পঞ্চায়েতগুলিকে জানিয়ে দিয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে,চলতি আর্থিক বছরে (২০২৪-২৫) শুরুতে জেলার ২১৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতে ছিল ১৮০ কোটি ১৮ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা। ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার মধ্যে খরচ হয়েছে ১৫০ কোটি ৯ লক্ষ টাকা।সব পঞ্চায়েত গুলি মিলিয়ে এখনও পড়ে আছে ৩০ কোটি ৯ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা। সেখানে জেলার ২০টি ‘দুর্বল’ পঞ্চায়েতে পড়ে রয়েছে ৭ কোটি ৩৭ লক্ষ ১১ হাজার টাকা।জেলার ২৩টি পঞ্চায়েত সমিতি প্রাপ্য টাকার প্রায় ৯০ শতাংশ খরচ করতে পারলেও জেলা পরিষদ আর্থিক বছর শেষ হওয়ার দোর গোড়ায় পৌছে মাত্র ৪৫ শতাংশ টাকা খরচ করেছে ।টাকা খরচে জেলাপরিষদের এমন ’ধীর ‘গতি’ দেখে খোদ পঞ্চায়েত সচিবও বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে হওয়া একটি সভায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেছিলেন।
পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকে প্রাপ্য অর্থ খরচে ব্যর্থ
পঞ্চায়েত গুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জেলার কালনা ২ ব্লকের বাদলা পঞ্চায়েত। এই পঞ্চায়েতের কাছে ২ কোটি টাকার বেশী ছিল । তাদের হাতে এখনও পড়ে রয়েছে প্রায় ৯৩ লক্ষ টাকা ।১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা আউশগ্রাম ২ ব্লকের ভেদিয়া পঞ্চায়েতের কাছে ছিল। পড়ে রয়েছে ৬৪ লক্ষ টাকা। চলতি আর্থিক বছরের শুরুতে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নসরৎপুরের কাছে ছিল ১ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা।পুরো এই টাকা খরচ করতে না পারায় এখন তাদের হাতে ৫৫ লক্ষ টাকা রয়ে আছে। ১ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকার মধ্যে খরচ করেছে ১ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা। তাদের কাছে পড়ে আছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করেছে বর্ধমান ১ ব্লকের বেলকাশ পঞ্চায়েত । আর বর্ধমান ২ ব্লকের বড়শুল ২ পঞ্চায়েত তাদের কাছে থাকা ১ কোটি ১৮ লক্ষ টাকার মধ্যে ৪৮ লক্ষ টাকা এখনও পড়ে রয়েছে।
এই সকল পঞ্চায়েতগুলি ছাড়াও কেন্দ্রের অর্থ খরচের নিরিখে ‘দুর্বল’ পঞ্চায়েত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে কালনা ২ ব্লকের সাতগাছি,বৈদ্যপুর, কল্যাণপুর পঞ্চায়েতকে। সাতগাছি পঞ্চায়েতের ৪৫.১৬ লক্ষ টাকা), বৈদ্যপুরের ৩৫.৯৮ লক্ষ টাকা, এবং কল্যাণপুরের ২৩.৯৮ লক্ষ টাকা এখনও পড়ে রয়েছে। বাকি পঞ্চায়েত গুলির মধ্যে কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের ৪২.৫৪ লক্ষ টাকা, কেতুগ্রাম ১ ব্লকে পালটিয়া পঞ্চায়েতের ৩৫.৮০ লক্ষ টাকা,পূর্বস্থলী ২ ব্লকের পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের ২৯.৯৫ লক্ষ টাকা, ঝাউডাঙা পঞ্চায়েতের ২৫.৬৫ লক্ষ টাকা, কালেখাঁতলা ২ পঞ্চায়েতের ২৪.৭২ লক্ষ টাকা, রায়না ১ ব্লকের হিজলনা পঞ্চায়েতের ২৯.৩১ লক্ষ টাকা, গলসি ১ ব্লকের পারাজ পঞ্চায়েতের ২৮.৭৯ লক্ষ টাকা আউশগ্রাম ২ ব্লকের এড়াল পঞ্চায়েতের ২৭.৬৮ লক্ষ, মেমারি ১ ব্লকের দেবীপুর পঞ্চায়েত ২৬.৩০ লক্ষ, ভাতারের নিত্যানন্দপুর পঞ্চায়েতের ২৬.২২ লক্ষ টাকা, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দোগাছিয়া পঞ্চায়েত ২৫.২৩ লক্ষ টাকা এখনও খরচ করতে পারেনি ।
বৈঠকে এইসব পঞ্চায়েতের প্রধানরা ছাড়াও নির্মাণ সহায়ক, নির্বাহী সহায়করা উপস্থিত ছিলেন। টাকা খরচ করতে না পারার কারণ হিসাবে পঞ্চায়েতের কর্তা ও আধিকারিকরা কর্মী সংখ্যা কম থাকার কথা শুনিয়েছে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের। এ ছাড়াও দরপত্রের সমস্যা, টাকা খরচ হয়ে গেলেও ’পোর্টালে’ তা না দেখানো , প্রভৃতি না সমস্যার কথাও পঞ্চায়েত গুলি জানিয়েছে। তবে ’দুর্বল’ চিহ্নিত হওয়া সব পঞ্চায়েতগুলিরই বক্তব্য,বেঁচে যাওয়া টাকা চলতি মাসের মধ্যেই খরচ হয়ে যাবে। জেলাশাসক এদিনের বৈঠকে বিডিওদের ‘দুর্বল’ পঞ্চায়েত গুলির দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।।

