এইদিন ওয়েবডেস্ক,রোম,০৪ ডিসেম্বর : উদার অভিবাসন নীতির কারনে ইতালির মহিলাদের জীবন কার্যত দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে । পাকিস্তানি ও আরব শরণার্থীদের দ্বারা ইতালির বিভিন্ন বয়সের মহিলাদের প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়ানোও এখন নিরাপদ নয় । কারন যেকোনো সময় যেকোনো ইতালিয় মেয়ে মুসলিম শরণার্থীরা রাস্তা থেকে অপহৃত হয়ে ধর্ষণ বা গনধর্ষণের শিকার হতে পারেন । সাম্প্রতিক সময়ে এমন বহু নজির আছে ইতালিতে । এমনই একটি ঘটনায় ইতালির এক পাকিস্তানি অভিবাসীর বিচার চলছে ।
ইয়াসির ইমরান(৩৯) নামে ওই পাকিস্তানি অভিবাসীর বিরুদ্ধে এক জার্মান কিশোরীকে প্রায় দুই বছর ধরে রোমের একটি ফার্মহাউসে বন্দী করে রেখে লাগাতার ধর্ষণ,মারধর, সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । মঙ্গলবার একটি ইতালীয় আদালত শুনেছে যে ইয়াসির ইমরান কিভাবে ওই কিশোরীকে ইতালির রাজধানী থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সেসানো শহরের একটি রাইডিং স্কুলের একটি আস্তাবলের রেখে নারকীয় অত্যাচার চালিয়েছিল । স্কুলের আস্তাবলের ব্যবস্থাপক ছিল ইয়াসির ইমরান । মেয়েটির বয়স ১৭ বছর ছিল তখন ।
জানা যায়,আলি রোজ(২৯) নামে একজন পাকিস্তানি বংশভূত ইতালিয় নাগরিকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ওই কিশোরীর । ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আলিই মেয়েটিকে ওই রাইডিং স্কুলের আস্তাবলে নিয়ে গিয়েছিল । আলি রোজ ইতিমধ্যেই বিচারের মুখোমুখি হয়েছে । তাকে যৌন সহিংসতা, অপহরণ, শারীরিক আঘাত এবং আরও খারাপ আচরণের জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ইয়াসির এখন একই ধরনের অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছে এবং তার বিরুদ্ধে জার্মান কিশোরীকে নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
ইল জিওর্নালে পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী,আলি রোজের বিচারে, আদালত শুনেছে কিভাবে সে জার্মান মেয়েটিকে ইতালীয় গ্রামাঞ্চলের খামারবাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল,যেখানে তারা ইয়াসির ইমরানের সাথে দেখা করেছিল,রোজের আত্মীয় ইয়াসির ইমরান । নির্যাতিতা মেয়েটি বলেছে,’আমি রোজকে ভালোবাসতাম, আমি আশা করেছিলাম সে বদলে যাবে। আমি তার সাথে রোমে গিয়েছিলাম, কারণ আমরা খুশি ছিলাম,মাঝে মাঝে যদিও সে আমার সাথে জার্মানিতে অশোভন আচরণ করত ।’ নির্যাতিতা জানিয়েছে যে রাইডিং স্কুলে রাখার সময় তাকে আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে ইয়াসির ইমরান ও আলি রোজ ছাড়া তার বাইরে যাওয়া যাবে না। তার পরিচয় নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল এবং তার সেল ফোন ভেঙে ফেলা হয়েছিল । পরে সে একটি নতুন সেল ফোন জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছিল । ওই দু’জন পাকিস্তানি তাকে প্রায় দুই বছর ধরে পাশবিক নির্যাতন করেছিল এবং ভয়ঙ্কর সহিংসতার শিকার হয়েছিল বলে জানিয়েছে নির্যাতিতা । নির্যাতিতা বলেছে,,’আমাকে বারবার যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে, পেটে ঘুষি মেরেছে এবং হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে,আমার শরীরে সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকা দিয়েছে তারা ।’
জানা গেছে,২০২১ সালের ২৭ মে যখন মেয়েটিকে ওই পাকিস্তানি জুটি মেয়েটিকে জনসমক্ষে নিয়ে যায় সেই সময় একজন পাশ দিয়ে যাওয়া মোটরচালকের সন্দেহ করে যে সে স্বেচ্ছায় পুরুষদের সাথে ছিল না । এরপর সে হস্তক্ষেপ করে । মোটরচালক আদালতে
সাক্ষ্যদানের সময় বর্ণনা করেছেন যে কীভাবে তিনি গাড়িতে ছিলেন এবং দেখেছেন দুই সশস্ত্র ব্যক্তি তাকে ধরে টানছে। আমি অবিলম্বে ১১২ নম্বরে কল করলাম। তারপর আমি ফিরে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম সবকিছু ঠিক আছে কিনা । তিনি বলেন, ‘মেয়েটিকে আতঙ্কিত দেখাচ্ছিল, সে আতঙ্কে কোনো উত্তর দিতে পারছিল না। দুজনের একজন বলল যে সে মেয়েটির স্বামী। আমি তাকে বিশ্বাস করিনি এবং মেয়েটিকে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, এরপর মেয়েটি আমার গাড়িতে উঠেছিল এবং ইংরেজিতে আমাকে ধন্যবাদ জানায়। তারপর আমি তার সাথে পুলিশের কাছে যাই ।’
জানা গেছে,এই মামলায় ফার্মহাউসের অন্যান্য কর্মচারীদের বিচারে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল এবং মেয়েটির বন্দিত্ব সম্পর্কে তারা কিছু জানেনা বলে দাবি করেছিল । ফার্মহাউসের অন্যান্য কর্মচারীরা এই ঘটনার সাথে কতটা জড়িত ছিল বা তারা সত্যিকার অর্থে এই ভয়াবহতা সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল কিনা তা জানার চেষ্টা করছে আদালত ।।