এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাঁকুড়া,১৬ মার্চ : পাত্রীকে দেখতে এসে পছন্দ হয়ে গিয়েছিল যুবকের । এতটাই পছন্দ হয়ে গিয়েছিল যে তিনি ওই দিনেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন । তাও বিনা পনে । পাত্রীর পরিবারকেও রাজি করিয়ে ফেলেন যুবক । এদিকে বিনা পনে মেয়ের বিয়ে হবে দেখে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন পেশায় পরিচারিকা পাত্রীর মা । মেয়েকে পাত্রস্থ করার জন্য বাড়িতে নামেমাত্র অনুষ্ঠানের আয়োজনও করে ফেলেছিলেন তিনি । কিন্তু দশম শ্রেণীর পড়ুয়া মেয়েটির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হতে এখনও দু’মাস বাকি । আর এই খবর কোনওভাবে চলে যায় চাইল্ড লাইনের কাছে । তাই শেষ পর্যন্ত আর শ্বশুরবাড়ির যাওয়া হল না কিশোরী কনের । পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই ছাত্রীর বিয়ে রুখে দেয় চাইল্ড লাইনের আধিকারিকরা । সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে না দেওয়ার জন্য তাঁরা কিশোরীর মাকে দিয়ে অঙ্গীকার পত্রে স্বাক্ষরও করে নেন । মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়া পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পালিত বাগান এলাকায় ।
পালিত বাগান এলাকার বাসিন্দা ওই কিশোরী বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান । সে স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্রী । বাবা মানসিক প্রতিবন্ধী । মা পরিচারিকার কাজ করেন । মূলত তাঁর উপার্জনেই তিন জনের সংসারের অন্ন সংস্থান ও কিশোরীর পড়াশোনার খরচ চলে ।
মেয়েটির মা বলেন, ‘আমার স্বামী থেকেও নাই । তিনটে বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে আমি কোনও রকমে সংসার চালাই । তার মধ্যে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চলে । এই পরিস্থিতির মাঝে মঙ্গলবার এক যুবক দেখতে এসেছিল আমার মেয়েকে । সে বিনা পনে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় । আমার মেয়েরও ছেলেকে দেখে পছন্দ হয়ে যায় । তাই পাত্রের কথামত ওইদিন রাতেই বিয়ের আয়োজন করেছিলাম ।’
জানা গেছে,পাত্রের নাম কাশিনাথ লোহার। তাঁর বাড়ি ওন্দা ব্লকের একড়া এলাকায় । মঙ্গলবারেই প্রথম তিনি মেয়েটিকে দেখতে এসেছিলেন । আর একবার দেখাতেই খুব পছন্দ হয়ে যায় তাঁর । ওই দিনেই কিশোরীকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন । এদিকে এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি মেয়েটির মা । বিধিমত কন্যাদানের জন্য নামমাত্র অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফেলেন তিনি । আর তখনই পুলিশবাহিনী বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় বাঁকুড়ার চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিরা ।
চাইল্ড লাইনের টিম মেম্বার শুভ্র শীট বলেন, ‘মেয়েটির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হতে এখনও ২ মাস বাকি । সুতরাং আইনত এই বিয়ে বৈধ নয় । তাই উভয়পক্ষের সম্মতিতে বিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে ।’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘মেয়েটি ২ মাস পরে কন্যাশ্রীর জন্য ২৫ হাজার টাকা পাবে । আবার রুপশ্রীর জন্য আরও ২৫ হাজার টাকা পাবে । এই সমস্ত বিষয়গুলি মেয়েটি ও তার পরিবারকে বোঝানো হয়েছে । তার পরেও যদি পরিবার তাঁদের মেয়ের বিয়ে দিতে চান তাহলে ২ পর বিয়ে দিতে আইনত কোনও সমস্যা থাকবে না বলেও জানিয়েও দেওয়া হয়েছে ।’ এদিকে মেয়েটি জানিয়েছে পাত্রটি তাঁর পছন্দ । মেয়ের মা জানিয়েছেন ২ মাস পরেই মেয়ের বিয়ে দেবেন । পাত্রও ২ মাস অপেক্ষা করতে রাজি বলে জানা গেছে ।।