এইদিন ওয়েবডেস্ক,লাহোর(পাকিস্তান),০৩ মে : পাকিস্তানের ১৫ বছর বয়সী ১৫ বছরের খ্রিস্টান মেয়েকে অপহরণের পর ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত এবং নিকাহ করতে বাধ্য করা হয়েছে । পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের বাদিন জেলার প্রত্যন্ত তান্ডো গুলাম আলি শহরের সালমান মসিহ ক্রিশ্চিয়ান ডেইলি ইন্টারন্যাশনাল-মর্নিং স্টার নিউজকে বলেছেন, ‘প্রায় দুই মাস হয়ে গেছে যে আমি আমার নাবালিকা মেয়ে মাসিহ মুসকানকে খুঁজছি । সে গত ১১ মার্চ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছিল, কিন্তু তাকে পুনরুদ্ধারের জন্য পুলিশের কাছে আমার বারবার আবেদন সত্ত্বেও, আমার সন্তান এখনও মুসলিম অপহরণকারী, “আরসালান আলীর” হেফাজতে রয়েছে ।’
জানা গেছে,মাসিহ মুসকানের অপহরণের এক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের কাছে একটি অপহরণের মামলা রজু করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন তার বাবা সালমান মসিহ । কিন্তু অনান্য হিন্দু বা খ্রিস্টান মেয়েদের অপহরণের ঘটনার মত এক্ষেত্রেও হাত গুটিয়ে বসে আছে পাকিস্তানি পুলিশ ।
সালমান মসিহ বলেন,’অনেক ঘন্টা অপেক্ষা করার পর, আমাকে বলা হয়েছিল যে পরের দিন একটি পুলিশ দল আমার বাড়িতে আসবে, কিন্তু তার জন্য আমাকে তাদের গাড়ির ‘জ্বালানি খরচ’ বাবদ ৫,০০০ পাকিস্তানি রুপি (১,৭৯৩ মার্কিন ডলার) দিতে হবে । পুলিশের উদাসীন মনোভাব অভিযুক্তকে আমার মেয়েকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে এবং তার ঘৃণ্য কাজ করতে সাহায্য করেছে।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী,অপহরণকারী আরসালান আলীর বয়স ২৫ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে । সে মাসিহের মেয়ে মুসকানকে জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিত করেছে । অপহরণের ঘটনাকে আড়াল করতে বিবাহের শংসাপত্র জাল করেছে । সালমান মসিহ বলেন,’পুলিশ আমাকে যে নথিপত্র দিয়েছে তাতে দেখা গেছে যে যেদিন মুসকানকে বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়েছিল সেই দিনই ইসলাম ধর্মান্তরিত ও নিকাহ (বিবাহের সনদ) অনুষ্ঠিত হয়েছিল । পরের দিন, আরসালান মিরপুর খাস তহসিলের জাস্টিস অফ পিস আদালতে মুসকানের নামে একটি পিটিশন দাখিল করে যেখানে সে বলেছিল যে মেয়েটি ১৯ বছর বয়সী একজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং নিজের ইচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেছে ।’ মুসকানের নামে আবেদনে মসিহের পরিবারের কাছ থেকে হুমকির কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুরক্ষাও চাওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন । মাসিহ বলেন,’তার মেয়ে অভিযোগ করেছে যে অপহরণকারী তাকে স্কুলে গেলে হয়রানি করত।আমি বিশ্বাস করি না যে মুসকান স্বেচ্ছায় আরসালানের সাথে গেছে, কারণ সে নিজেই তার খারাপ কাজের কথা আমাদের বলেছিল । আমরা বিষয়টি আরসালানের পরিবারের নজরে এনেছি এবং তারা তাকে প্রতিহত করার আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু পরিবারও তাকে সমর্থন করছে ।’
মাসিহ বলেন, আলীর হয়রানির কারণে তিনি মুসকানের পড়ালেখা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন ।
মুসকানের মোবাইল ফোনে ছিল না,এবং সে একা বাড়ির বাইরে যেত না, যে কারণে আমি বিশ্বাস করি অভিযুক্তের সাথে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না । আমি জানি না কিভাবে সে সেই দুর্ভাগ্যজনক দিনে তাকে বাড়ি থেকে অপহরণ করতে সক্ষম হয়েছিল।’
দরিদ্র স্যানিটেশন কর্মী মাসিহ বলছেন যে তার ভয় ছিল আলী তার মেয়েকে যৌনতার পেশার জন্য নিয়ে যাবে। আর্সালানের এলাকায় একটি কুখ্যাতি রয়েছে, এবং আমি ভয় করি যে আমার সন্তানের হেফাজত থেকে উদ্ধার না হলে তার সাথে খারাপ কিছু ঘটবে ।’ তিনি বলেন,’আমি খ্রিস্টান নেতৃত্বের কাছে আমার মেয়েকে খুঁজে পেতে এবং তাকে শারিরীক শোষণ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করার জন্য আবেদন করছি।’
তার অ্যাটর্নি, লুক ভিক্টর বলেছেন যে তিনি সিন্ধু হাইকোর্টের হায়দরাবাদ বেঞ্চে একটি জরুরী মোশন দাখিল করেছেন যে পিটিশনে মুসকানকে তার বয়স, ধর্ম পরিবর্তন এবং অপহরণকারীর সাথে বিবাহ সম্পর্কে মিথ্যা দাবি করতে বাধ্য করা হয়েছিল ।।