এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩০ এপ্রিল : মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার বড়বাজারের মদন মোহন মেছুয়াবাজার ফলপট্টির একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে মহিলা ও শিশুসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে । দুই হোটেলকর্মী প্রাণ বাঁচাতে উপর থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন । কিন্তু তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন । মৃতদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ, একজন মহিলা আছে বলে । এছাড়াও একজন বালক ও একজন বালিকা মারা গিয়েছে। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত আটটি মৃতদেহ শনাক্ত করা হয়েছে । মৃতদেহগুলি আর জি কর হাসপাতাল, এন আর এস ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে । আরও অনেকে গুরুতর দগ্ধ বা ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়েছেন । ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ।
এই ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । সেই সঙ্গে মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছেন তিনি । এছাড়াও আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য করা হবে বলেও জানানো হয়েছে । প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে এই আর্থিক সাহায্য করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে পিএমও-এর এক্স হ্যান্ডেলে ।
প্রসঙ্গত,কলকাতায় অগ্নিকাণ্ড বা বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনা নতুন কিছু নয় । এর আগে ২০১০ সালের মার্চে স্টিফেন কোর্ট ভবনে এবং ২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল । স্টিফেন কোর্ট ভবনে বিধ্বংসী আগুনে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। হাসপাতালে বিধ্বংসী আগুনে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। বারবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে থাকায় মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার ও ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বাধীন কলকাতা পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।
এদিকে কলকাতায় যখন অগ্নিকাণ্ডে মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন অন্যদিকে দীঘায় ‘জগন্নাথ ধাম কালচারাল সেন্টার’-এর উদ্বোধনে ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার । তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন,’গতকাল বড়বাজারের মেছুয়াতে এক হোটেলে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে ক্রমেই মৃতের সংখ্যা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। প্রচুর নিরীহ মানুষ এখনও ভয়ানক মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অথচ এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতেও বাংলার ‘মানবদরদী’ মুখ্যমন্ত্রীর কোনও দেখা নেই! অক্ষয় তৃতীয়ার পূণ্যলগ্নে তিনি একসারি অভিনেতা অভিনেত্রী, এবং তাঁর স্তাবক পারিষদগণকে নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন দীঘায় জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন যজ্ঞে!
বাংলার তথা ভিন রাজ্য থেকে আগত নিরীহ মানুষদের অগ্নিদগ্ধ হয়ে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলেও তিনি এই মুহূর্তে নেই। এই বিশালাকার ব্যর্থতা নিয়ে তাঁর কোনও নূন্যতম অনুশোচনা নেই। এতেই স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, পশ্চিমবঙ্গের ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ঠিক কোনটা প্রাধান্য পায়! ধর্ম নিয়ে ছেলেখেলা নাকি কর্তব্যপালন!
আমরা মনে করছি, এই বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড নিছক কোনও দুর্ঘটনা নয়। সরকারের ব্যর্থতায় যে সকল নিরীহ ব্যক্তিদের মৃত্যু হয়েছে, এই মর্মান্তিক মৃত্যু আদতে ‘খুন’। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমাদের বিনম্র সমবেদনা জানাই। আমরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে তাঁদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। আমরা এই চরম কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁদের সঙ্গে দৃঢ় ভাবে রয়েছি। এই মুহূর্তে সমস্ত প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। ধর্ম নিয়ে ছেলেখেলা করা ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রীর এবার অন্তত বোঝা উচিত, ভগবান জগন্নাথদেব রুষ্ট হয়েছেন।’।