শ্যামসুন্দর ঘোষ,কালনা(পূর্ব বর্ধমান),২৬ ডিসেম্বর : বামফ্রন্টের জমানায় ১৯৯৮ সালের ৮ আগস্ট মন্তেশ্বর ব্লকের সামাসপুর গ্রামে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছিল । ঘটনার দিন শম্ভুনাথ ঘোষ (৫০) ও তাঁর ভাই বিভূতি ঘোষকে (৪২) বোমা মেরে ও নৃসংশভাবে কুপিয়ে খুন করা হয় । এই ঘটনায় নিহতদের কাকা প্রথমে ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করেছিলেন । পরে পুলিশ তদন্তে নেমে আরও ৫ জনকে গ্রেফতার করে । মোট ১৪ জনের নামে কালনা মহকুমা আদালতে চার্জশিট পেশ করে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ । মামলা চলাকালীন দুই অভিযুক্তের মৃত্যু হয় । একজনকে বেকসুর খালাস করে দেন বিচারক । বাকিদের মধ্যে নিহতদের প্রতিবেশী কুমারেশ ঘোষ, কেশব ঘোষ, বিকাশ ঘোষ, ধনঞ্জয় ঘোষ, সদানন্দ ঘোষ,প্রকাশ ঘোষ, হারাধন ঘোষ, চাঁদু ঘোষ, ধর্মদাস ঘোষ, ধনঞ্জয় মণ্ডল ও বাসু মণ্ডলকে বছর চারেক আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত । পরে কালনা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সাজাপ্রাপ্তরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় । কিন্তু হাইকোর্টও সম্প্রতি তাঁদের সাজা বহাল রাখে । ইতিমধ্যে দুই সাজাপ্রাপ্তের মৃত্যু হয় । এদিকে হাইকোর্টের রায়ের পর বাকি ১০ সাজাপ্রাপ্ত গাঢাকা দেয় । দিন চারেক আগে তাঁরা কালনা আদালতে আত্মসমর্পন করেন । দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছর পর জোড়া খুনে অভিযুক্তরা সাজা পেতে চলায় খুশি নিহতদের পরিবার । অন্যদিকে অভিযুক্তদের পরিবার জানিয়েছে তারা সুপ্রীম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন ।
আদালত সূত্রে জানা গেছে,নিহতদের কাকা মন্তেশ্বর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে জানান, এলাকার একটি আমবাগানের দখলকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের বাসিন্দা কুমারেশ ঘোষের পরিবারের সঙ্গে শম্ভুবাবু ও বিভূতিবাবুর দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল। ঘটনার আগের দিন বিকালেও দু’পক্ষের মধ্যে একপ্রস্থ বচসা হয় । ঘটনার দিন (২৮/০৭/১৯৯৮) সকাল ৬.৩০ নাগাদ শম্ভুবাবু মাঠে গেলে কুমারেশ ঘোষ ও তাঁর তিন ছেলে মিলে হাত বলিতিতে করে বোমা ভরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে আক্রমণ করেন। তাঁদের বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলেই শম্ভুবাবুর মৃত্যু হয় । খবর পেয়ে বিভূতিবাবু ঘটনাস্থলে গেলে কুমারেশ ঘোষ তাঁর তিন ছেলে এবং আরও কয়েক জন বিভূতিবাবুর উপরে হামলা চালায় । বিভূতিবাবু প্রাণভয়ে দৌড়ে গ্রামের মন্টু ঘোষ নামে এক গ্রামবাসীর বাড়িতে আশ্রয় নেন । কিন্তু সেখানে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে হামলাকারীরা । তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, হামলাকারীরা পালানোর আগে মন্টুবাবুর লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুকটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়
নিহত ও কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের পরিবারের বক্তব্য শুনুন:-
নিহত শম্ভুনাথ ঘোষের ছেলে প্রদীপ ঘোষ বলেন, ‘আমার বাবা-কাকা খুন হওয়ার আমার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর । আমার মা অনেক কষ্ট করে আমাদের মানুষ করেছেন । এতদিন পর খুনিরা সাজা পেতে চলায় আমরা খুশি । কিন্তু আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হলে আরও খুশি হতাম ।’ একই দাবি করেছেন নিহতদের ছোট ভাই রামকৃষ্ণ ঘোষ এবং নিহত বিভুতি ঘোষের স্ত্রী আরতিদেবী ।
অন্যদিকে সাজাপ্রাপ্তদের তরফে মনোজ ঘোষ বলেন,’আমরা বিরোধীদল করি । সেই কারনে আমাদের পরিবারের সদস্যদের চক্রান্ত করে ফাঁসিয়েছে শাসকদল । এই সাজায় শাসকদলের মদত আছে । সুবিচার পাওয়ার জন্য আমরা সুপ্রীম কোর্টে যাবো ।’।