প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ মে : ভোট মিটে গেলেও বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের নিশানায় রয়েই গিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো । শুক্রবার বিজেপির বর্ধমান জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে দিলীপ ঘোষ দাবি করেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবর দেশ ভাগের চক্রান্ত করছেন। যাঁরা দেশ বিরোধীতা,রাষ্ট্র বিরোধিত করছেন তাঁদের সঙ্গেই তিনি আছেন।পাকিস্তান ও বাংলাদেশের উগ্রপন্থীদের সুরে তিনি কথা বলছেন, এটা খুবই ভয়ংকর।এই টিএমসি সরকারকে ফেলে দেওয়া উচিত। ৪ তারিখের পর মানুষই বলে দেবে দিদি ঘুম পেয়েছে, বাড়ি যা“ দিলীপ ঘোষের এহেন মন্তব্য নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
সাংবাদিক বৈঠক থেকে শুধু তৃণমূল সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর সমালোচনা করেই এদিন দিলীপ ঘোষ খান্ত থাকেন নি।তিনি ওবিসি সার্টিফিকেট নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের প্রসঙ্গ নিয়ে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেনতিনি বলেন ভুয়ো সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরি করলে যেমন চাকরি যায় তেমনি ভুয়ো আইন করে যাঁরা ক্ষমতায় এসেছে তাঁদের সরকারও ফেলে দেওয়া উচিত। কারণ নৈতিক ভাবে এরা সংবিধানকে ধোকা দিয়ে জিতে এসেছে। যারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আছে সেই সরকারের আদৌ ক্ষমতায় থাকা উচিত কিনা বিবেচনা করা দরকার।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন কোর্টের রায় মানবো না!প্যাঁচে পরে তিনি বারবার কোর্টে যাচ্ছেন। যখন সিঙ্গুরে জমির জন্য কোর্টে গিয়ে জিতে টাটাদের তাড়িয়েছিলেন তখন কোর্ট ঠিক ছিল। আজকে যেহেতু তাঁর অপকর্মের বিরুদ্ধে কোর্ট রায় দিয়েছে ,তাই তিনি কোর্টকে মানবেন না। আমরা জানি তিনি সংবিধান মানেন না,লোকসভার সিদ্ধান্ত মানেন না, সুপ্রিম কোর্টকে মানেন না। সিএএ, জিএসটির বিরোধিতা করেছেন, তিন তালাকের বিরোধিতা করছেন। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা হটানো হয়েছে তিনি তারও বিরোধিতা করছেন। এই যে মানসিকতা এটা বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতা। স্বাধীনতার আগে এরকম হয়েছিল বলে দেশ ভাগ হয়েছিল।
নন্দীগ্রামের ভেটুরিয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে ৬ জন তৃণমূল কর্মী আক্রান্ত হওয়ায় অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন,
অভিযোগ যে কেউ করতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ওখানে গিয়ে হেরেছেন, তাই সেখানে জেতার সম্ভাবনা নেই। বড় আকারে লিড আমরা পাব। শুভেন্দু অধিকারী ওখানকার বিধায়ক,তিনি লড়াই করছেন। সেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে, হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে সেরকম রক্ত ঝরেনি, খুন হয়নি, কিন্তু শেষের দিকে আবার শুরু হয়ে গেল। যত ভোটের শেষের দিকে আসছে তত ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে। আমরা মারপিটের রাজনীতি করি না।যদি করতাম তাহলে উত্তরবঙ্গে দেখিয়ে দিতাম।
নন্দীগ্রামে অশান্তি নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, দক্ষিণবঙ্গে যেখানে ইলেকশন হচ্ছে, সেখানেই এরকম ঘটনা ঘটছে।তৃণমূল বুঝতে পেরেছে জেতার কোথাও চান্স নেই । ভোটারদের, কর্মীদের ভয় দেখিয়ে আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যা করার এবার ইলেকশনে করে নিচ্ছে। খুন খারাপি চলতেই থাকে।তবে এবার প্রথম বোধহয় খুন হল ইলেকশনে।তবে এরপরে পশ্চিমবঙ্গে ইলেকশনে আর এসব হবে না। একজন ৫৬ বছর বয়সী মহিলাকে যেভাবে খুন হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের কি সুরক্ষা আছে তা বোঝা যাচ্ছে। বাংলাদেশের একজন এমপি এখানে চিকিৎসা করাতে এসে খুন হয়ে গেছে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে কার সুরক্ষা আছে।দেশী বিদেশী, ধনী গরিব শহর গ্রাম কোথাও সুরক্ষা নাই।
প্রধানমন্ত্রীকে মমতার ডিবেট চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন,“প্রধানমন্ত্রীর কোন কাজ নেই। ফালতু লোকেদের সঙ্গে ডিবেট করবেন।যাদের কোন কাজ নেই তারা ডিবেট করবে!আমরা কাজ করি সাধারণ মানুষের জন্য। প্রধানমন্ত্রী তাই করছেন। প্রধানমন্ত্রী কি কাজ করছেন তা বলবে সাধারণ মানুষ।
দেবের সিনেমায় গরু পাচারকারী এনামুলের টাকা প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন,“এসব তথ্য প্রমাণ আছে বলেই ইডি সিবিআই ডাকছে। উনাকেও ডাকা হয়েছে। এখন জবাব দেবেন উনি।তথ্য প্রমাণ থাকলে কোর্ট গিয়ে জবাব দিতে হবে।পাঁকে তে যারা ঢুকেছে,টিএমসি পার্টিতে যারা গেছে তাদের গায়ে কালির দাগ লেগেছে।
কলকাতার রাজপথে সাধু সন্তদের নামা প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, পশ্চিমবাংলার সমস্ত পেশার মানুষ তারা কোন না কোন ভাবে প্রতারিত, বঞ্চিত। বাকী ছিল সাধু সন্তরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদেরকেও অসম্মান করেছেন। তারা বুঝতে পেরেছেন তৃণমূল থাকলে মঠ মন্দির চালানো মুশকিল। মঠ মন্দিরের জায়গা লুঠ হয়ে যাচ্ছে, সম্পত্তি লুঠ হয়ে যাচ্ছে। সাধু সন্তরা মারা যাচ্ছে। গঙ্গা সাগর যাওয়ার পথে পুরুলিয়ায় সাধুদের উপর আক্রমণ হয়েছিল। মারা হয়েছিল তাদের। সেই দৃশ্য আমরা দেখেছি।সাধুদের জীবন ও ধন সম্পত্তির সুরক্ষা নাই।তারা তারা রাস্তায় নামছেন।
দিলীপ ঘোষের এইসব মন্তব্য প্রসঙ্গে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন,উনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসকে অপমান করে কার্যত বাংলার মানুষকে অসম্মান করছেন। ভোটে মানুষের রায়ে বিজেপি বাংলা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে। মানুষের আর্শীবাদের সরকারকে উনি ফেলে দিতে চাইছেন। বাংলার মানুষ তার যোগ্য জবাব দেবে ।।